শেরশাহ - সিদ্ধার্থের কেরিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট?
লেখার শুরুতেই আপনাদের সবার উদ্দেশ্যে একটা অনুরোধ করতে চাই। আপনি যদি দুর্বল হৃদয়ের হোন, ইমোশনাল মোমেন্টসে চোখের জল আটকাতে না পারেন তাহলে প্লীজ, এই সিনেমার শেষ দশ মিনিটের জন্য আগে থেকে প্রস্তুত থাকবেন। এমনিতে যুদ্ধ নিয়ে বলিউডে সিনেমার অভাব নেই। কিন্তু কার্গিল যুদ্ধের নায়ক ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার জীবন অবলম্বনে তৈরি 'শেরশাহ'কে সিদ্ধার্থ মালহোত্রা এতটাই জীবন্ত করে তুলেছেন, যে প্রায় গোটা ছবিটার সাথেই আপনি অদ্ভুতভাবে একাত্ম হয়ে থাকবেন। আর এসব ইমোশনাল আউটবার্স্টটা হবে একেবারে শেষে- চোখের জল আটকে রাখা যেখানে একেবারেই সহজ কথা নয়। আমি কিন্তু পারিনি, আপনি পারলেন কিনা সেটা জানার অপেক্ষায় রইলাম।
সিদ্ধার্থ মালহোত্রাকে একটা সময় বলিউডের নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম সেরা প্রতিভা বলে মনে করা হতো। 'স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার', 'হাসি তো ফাসি' বা 'এক ভিলেন'-এর পর ভদ্রলোকের কেরিয়ারের গ্রাফ তখন ভীষণভাবে উর্দ্ধমুখী। কিন্তু সাফল্য এমন একটা জিনিস, যা পাওয়া যতটা কঠিন, তাকে টিকিয়ে রাখা তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন। দেখতে দেখতে সেই লোকটাই এরপর 'বার বার দেখো','এ জেন্টেলম্যান' বা 'মারজাওয়ান'-এর মত ছবি করতে আরম্ভ করলেন। 'বার বার দেখো' তবুও একটা সৎ প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু এক ভিলেনের অমন একটা হিট ফর্মুলা থাকা সত্ত্বেও 'মারজাওয়ান' খুবই খারাপভাবে ফ্লপ করে। 'হাসি তো ফাসি'র সাফল্যের পরে সেই সিদ্ধার্থ-পরিণীতি জুটিকে আরো একবার ফিরিয়ে আনা হয়েছিল 'জাবারিয়া জোরি' ছবিতে। কিন্তু সেই ছবি ঠিক কতজন দেখেছেন, সেটা রীতিমত আতশকাঁচ দিয়ে খুঁজতে হবে ! শেষ সোলো হিট বলতে সেই সাত বছর আগে, এমতবস্থায় সিদ্ধার্থের মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ একটা ছিলই৷ আর সেই ফিরে আসার পারফেক্ট মঞ্চই হলো 'শেরশাহ'। সিনেমাটা নিয়ে কিছুটা পড়াশোনা করে যা বুঝলাম, তাতে ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার চরিত্রের জন্য সিদ্ধার্থই ছিলেন প্রথম পছন্দ। এমনকি রিয়েল লাইফ বাত্রা ফ্যামিলিও তাদের ছেলের সাথে সিদ্ধার্থের অনেক মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। অবশ্য প্রায় একই গল্প নিয়ে এর আগে 'এল ও সিঃ কার্গিল'-এর মত ছবি হয়ে গিয়েছে, বিক্রম বাত্রার চরিত্রে যেখানে ছিলেন অভিষেক বচ্চন৷ যদিও আমি এই সিনেমাটা দেখিনি, তাই এই দুটো ছবির মধ্যে তুলনায় যাবো না৷ তবে অভিষেক এবং সিদ্ধার্থ দুজনেই দুজনের মত করে এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
তবে এই সিদ্ধার্থ বন্দনার মাঝে আরো দু-একটা কাজের কথা বলে যাই। 'শেরশাহ' ছবির স্ক্রিপ্ট বেশ ভালো, সোয়া দু'ঘন্টার সিনেমা একবারের জন্যও স্লো বলে মনে হয় না। সিনেমাটোগ্রাফি ভীষণই সুন্দর, কার্গিল উপত্যকা বা যুদ্ধের বেশ কিছু দৃশ্য দারুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি যে এই ধরনের সিনেমায় নারী চরিত্রের স্ক্রিন টাইম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। কিন্তু ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার ব্যক্তিগত জীবনকে তুলে ধরতে গিয়ে তার বাগদত্তা, অর্থাৎ ডিম্পলকেও সমানভাবে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ছবিতে এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিয়ারা আদবাণী। এমনিতে ধোনি হোক বা মেশিন, গুড নিউজ হোক বা গিল্টি, বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে কিয়ারাকে দারুণ সুন্দরভাবে মানিয়ে যায়। এখানেও কার্যত নো মেক আপ লুকে তিনি যতক্ষণ পর্দায় ছিলেন, তার দিক থেকে চোখ সরানো যায়নি। আবার ইমোশনাল দৃশ্যগুলিতেও তিনি একইরকমের সাবলীল। আর একজন আর্মি অফিসার হিসেবে শতফ ফিগারের ব্যক্তিত্বও বেশ মানানসই লেগেছে।
ছবিতে বেশ কয়েকটি গান আছে। এদের মধ্যে জুবিন নটিয়ালের গলায় 'কিত্থে চলিয়ে' গানটা মোটের ওপর ভালোই বলা চলে। কিন্তু তবুও বলবো, ছবির গানগুলো আরেকটু ভালো হতে পারতো৷ আর গানফাইটের সময়ে দু-একটা জায়গা আরো ভালোভাবে শ্যুট করা যেতে পারতো বলে মনে হলো।
তবে আরেকটা ছোট্ট কথা বলে এই লেখা শেষ করতে চাই। যেকোনো উগ্রপন্থী অথবা জঙ্গীগোছের চরিত্র এলেই মির সারওয়ারের ডাক পড়ে কেন ? সেই ফ্যামিলি ম্যান থেকে ব্যাপারটা দেখে আসছি। তারপর কিছুদিন আগে রিলিজ করা স্টেট অফ সিজেও একই জিনিস দেখলাম। আবার এখানেও তার চরিত্রের নাম হায়দার, যেটিও প্রায় সেই একই আদলে বানানো। একটানা একই ধরনের চরিত্র করতে করতে ভদ্রলোক হাঁপিয়ে ওঠেন না? নাকি বলিউডই ওনাকে অন্য কোনো চরিত্রে ভাবতে পারছে না? প্রশ্নটা তোলা রইলো৷
কি, এখনো ভাবছেন? দর্শক এবং সমালোচকদের বিচারে এই ছবি ইতিমধ্যেই হিট। তবে ভবিষ্যতে যদি সিদ্ধার্থ মালহোত্রার ফিল্ম কেরিয়ার আবার আগের জায়গায় ফিরে আসতে পারে, তাহলে অবশ্যই তার টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকবে এই ছবি। 'শেরশাহ'। সম্ভব হলে আজই একবার সিনেমাটা সপরিবারে দেখে ফেলুন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না
তথ্য সংগ্রহ রিভিউ জিবি
রিভিউটি লিখেছেনঃ Rudranath Roy
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।