◇ সেনোরিটা ◇
~ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
নিজস্ব পছন্দের মানুষ আমাদের সবারই আছে; আছে আমাদের নিজেদের ভালোবাসার মানুষ। আর যদি সেই ভালোবাসার মানুষের থেকে ভালোবাসা পাওয়া যায় তাহলে জীবনটাই স্বর্গীয় হয়ে যায়! কিন্তু সেটা তো সবসময় হয়না। বিশেষত ভালোবাসার মানুষটি যদি হয় বিখ্যাত কোনো সেলিব্রিটি, তাহলে তো তাকে কাছে পাওয়া হাতে চাঁদ পাওয়ার মতই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সেই হাতে চাঁদ পাওয়ার স্বপ্নটাই যদি কারও কাছে বাস্তব হয়ে দাঁড়ায়?
এরকমই এক স্বপ্ন ও বাস্তবতার মিশেলে তৈরী মায়াজালে বন্দি সেনোরিটা, অর্থাৎ চন্দ্রলেখা। ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড়ো সুপারস্টারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তার। কিন্তু সেই সম্পর্ক সত্যি না মিথ্যে তা বুঝতে হলে নিজে পড়ে ফেলুন (যারা পড়েননি তাদের spoiler দিতে চাইনা)। উপন্যাসটি Psychological Thriller হিসেবে প্রমোট করা হয়েছে। তবে শেষের অংশটুকু বাদ কোথাও সেরকম থ্রিল পাইনি। তবে লেখকের লেখার হাত খুবই ভালো, তাই পুরোটা একটানা পড়ে গেছি। এটা আসলে একটা প্রেমের গল্প, একটা না-পাওয়া ভালোবাসার গল্প (অবশ্য চন্দ্রলেখা তার ভালোবাসা ঠিকই পেয়েছিল 😉)। তাই এটাকে রোম্যান্টিক ড্রামা হিসেবে পড়াই ভালো। সব মিলিয়ে দারুণ একটা উপন্যাস।
*Spoiler talk : যারা এখনও পড়েননি তারা এই পার্টটা পড়বেন না। অবশ্য আপনার ইচ্ছা হলে পড়তেই পারেন, তবে পড়লে আপনারই ক্ষতি।
অনেকেই আছে যারা কোনো একজন সেলিব্রিটিকে মন থেকে ভালোবাসি, তাকে নিজের খুব কাছে পেতে চায়। সেই ভালোবাসা যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় , তখন জন্ম হয় সেনোরিটার মতো চরিত্রের। গল্পটা পড়ে এখন আমারও মনে হচ্ছে আমার erotomania থাকলে ভালো হত।
তবে রিভিউটা লিখতে লিখতে আরেকটা ব্যাপার মাথায় এল...
What if... ঐ erotomaniaর ব্যাপারটা সত্যি না হয়? হতে পারে বৈশম্পায়ন যে চিঠিটা পেয়েছিল সেটা আসলে অনুরাগেরই লেখা আর অনুরাগ তার আর চন্দ্রলেখার সম্পর্কটা কাউকে জানাতে চায়না, তাই এরকম প্ল্যানিং করে চিঠি দিয়েছে...
একটু বেশিই ভেবে ফেলছি, তাই না? অত্যধিক থ্রিলার পড়ার ফল। লেখক হয়ত এরকম ভেবে লেখেননি (বা হয়ত ভেবেছেন)।
Anyway... অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে, তাই এখানেই শেষ করছি।
Happy Reading ✌️
রিভিউটি লিখেছেনঃ SØUHÂRDÝA
বইয়ের নাম : সেনোরিটা
লেখক : কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
টাইপ : সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার
প্রকাশনা : পত্রভারতী
"তবু এই পৃথিবীর সব আলো একদিন নিভে গেলে পরে,
পৃথিবীর সব গল্প একদিন ফুরাবে যখন,
মানুষ র’বে না আর, র’বে শুধু মানুষের স্বপ্ন তখন,
সেই মুখ আর আমি র’বো সেই স্বপ্নের ভিতরে।"
- জীবনানন্দ দাশ
মানুষ যখন কাউকে খুব ভালোবেসে ফেলে তখন কি করে? তার কাছে ছুট্টে চলে যায়, তাকে প্রেম নিবেদন করে বা তাকে একদম নিজের করে কাছে পেতে চায়। কিন্তু সেই মানুষটি মানে, মর্যাদায় উচ্চশ্রেণীর কোনো সেলিব্রেটি হয় আর তার প্রেমে পড়া মানুষটি যদি হয় একজন অতি সামান্য গ্রাম্য মেয়ে, তাহলে কি প্রেম সম্ভব?
সাধারণভাবে সম্ভবই নয় কিন্তু, মনের অতলস্পর্শী গহ্বর কি কি রহস্য লুকিয়ে রাখে তার মাঝে সে তো মনই জানে। আমাদের সবার মাঝে থেকেও কেউ কেউ বাঁচতে থাকে সম্পূর্ন তার নিজের সাজানো জীবনে, এখানে সবই তার নিয়ন্ত্রণাধীন, তার ইচ্ছেমতো সবই চলে এখানে, সেখানে কোন ভালোবাসার গল্পও গড়ে ওঠে যা হয়তো বাস্তবের মাটিতে অসম্ভব, কিন্তু তাই প্রবলভাবে সম্ভব হয়ে ওঠে তার কল্পনার উর্বর মাটিতে, কিন্তু বাইরের কারুর কাছে এসবের প্রকাশ বারণ।
এরকম কল্পনার প্রেমে মশগুল থাকা মানুষদেরও আবার কেউ নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে ফেলে, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা জানে ভালোবাসার মানুষটি তাকে কোনোদিনই ভালোবাসবে না তবুও প্রেমিকার যেন কোনো কষ্ট বা বিপদ না হয় সেটা তীক্ষ্ণ নজরে লক্ষ্য রেখে চলে সে আড়াল থেকে, প্রেম হবেই একদিন - এই আশা মনে নিয়ে।
আবার, এই প্রেমিকার আরেক কোনো মুগ্ধ প্রেমিক 'বৈশম্পায়ন' ও থাকে , ক্ষনিকের জন্য হলেও সে প্রেমের কোমল স্পর্শ দিয়ে মন ছুঁয়ে ফেলে, তখন সেই প্রেমিকাকে আবার সে বনলতা সেন বানিয়ে ফেলে।
সবমিলিয়ে, সেই প্যানপ্যানানি 'মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার', খুন এসবের বাইরে গিয়ে অন্যরকম একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হলো - 'সেনোরিটা'। গল্পের জিওগ্রাফিক্যাল প্লট অরণ্যসুন্দরী ঝাড়গ্রাম; সেই কনকদূর্গা মন্দির, ডুলুং নদী, জঙ্গল আর তার মাঝেই 'erotomania' এর কল্পনার জালে 'চন্দ্রলেখা'র 'সেনোরিটা' হয়ে ওঠার কাহিনী।
আসলে গল্পটার প্রেম কাহিনী চতুর্ভুজ, যার তিনটে বিন্দু বাস্তবে থাকলেও আরেকটি বিন্দু রয়েছে হয়তো অনেক আলোকবর্ষ দূরে। আমাদের সবার মনের ভেতরে একটা 'সেনোরিটা' লুকিয়ে আছে, মেরুদন্ডটা বেয়ে সেই সাপটা হয়তো উঠে আসার অপেক্ষায় রয়েছে, সুযোগ পেলেই আবার নতুন কেউ হয়ে উঠবে 'সেনোরিটা'।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Ranit Bera
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।