বই - "সেই সময়"
লেখক - "সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়"
"সেই সময়" শেষ করলাম এখন,গত কয়েকদিন ধরে এই বইটির মোহতে আচ্ছন্ন ছিলাম। মোহভঙ্গ হতেই যেন শূন্যতা গ্রাস করল।আবার শূণ্যস্থানে যেভাবে প্রবলবেগে বাতাস ছুটে আসে, আমার সেইরকমই উত্তেজনা হচ্ছে।
শেষ করে একটা কথাই মনে হচ্ছে, আমি এতদিন ধরে বাংলার ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ দশকের ইতিহাস পড়লাম বটে। কিন্তু ইতিহাস বই যেমন শুষ্ক হয়, এটা তেমন নয়। এখানে চরিত্রগুলো যেন আসলেই জীবন্ত। কিছুদিনের জন্য আমি সত্যিই ১৫০ বছর পিছিয়ে গেছিলাম।
এমন কোনো জিনিস নেই , যা লেখক স্পর্শ করে যাননি। এমনকি কিছু ঘটনা , কিছু মানুষ আসল নাকি লেখকের কল্পনা ,তা গুগল করেও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম না। সময় যেমন সবকিছুকেই গ্রাস করে, উপন্যাসের শেষটিও তেমন বিষাদময়। আমার আসল কষ্ট নবীনকুমারের জন্য নয়, কারণ তার মৃত্যু হবে তা আমি আগেই জানি। কিন্তু বিধুশেখরের কষ্টই যেন আমি বেশী উপলব্ধি করতে পেরেছি। বৃদ্ধ অবস্থার অসহায়তা এবং চোখের সামনে সকল প্রিয়জনের মৃত্যু হতাশাজনক। বাকি নানা মহাপুরুষদের আখ্যান ও কু-আখ্যান কান পাতলেই শোনা যাবে। শুধু সহ্য করার ক্ষমতাই চাই। বাংলা সাহিত্যে বইটি এক প্রকার ক্লাসিক হয়েই চিরকাল থেকে যাবে।
Book name : সেই সময়
Author name: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
এই সেই সময় যখন কলকাতার বাবুসমাজ সুরা, নারী ও বুলবুলি-বিলাসে মগ্ন, যখন নব্যশিক্ষিত যুবকেরা প্রাণপণে ইংরেজ-অনুকরণে মত্ত, গ্রাম নিঃস্ব করে প্রজাশোষণের অর্থে চলেছে সংস্কৃতি চর্চা, সমাজ ও ধর্মসংস্কার, তরুণ বিদ্যাসাগর রাত্রি জেগে রেড়ির তেলের আলোয় রচনা করছেন বাংলা গদ্যভাষা, জেগে উঠছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী, এই সেই সময়—
হ্যাঁ, একটি বিশেষ সময়ই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই সুকীর্তিত উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র। তিনি নিজেও এ-উপন্যাস সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছেন—“আমার কাহিনীর পটভূমিকা ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দ। এবং এই কাহিনীর মূল নায়কের নাম সময়।” লিখেছেন, “সময়কে রক্ত-মাংসে জীবিত করতে হলে অন্তত একটি প্রতীক চরিত্র গ্রহণ করতে হয়। নবীনকুমার সেই সময়ের প্রতীক। তার জন্মকাহিনী থেকে তার জীবনের নানা ঘটনার বৈপরীত্য, শেষ দিকে এক অচেনা যুবতীর মধ্যে মার্তৃরূপ দর্শন এবং অদ্ভুত ধরনের মৃত্যু, সবই যে সেই প্রতীকের ধারাবাহিকতা, আশা করি তা আর বিশদভাবে এখানে বলার প্রয়োজন নেই। নবীনকুমারের চরিত্রে এক অকাল-মৃত অসাধারণ ঐতিহাসিক যুবকের কিছুটা আদল আছে। অন্য কোনো প্রসিদ্ধ পুরুষের নাম বা জীবনকাহিনী আমি বদল করিনি....”।
সত্যিই তাই। নাটকের শুরুতে যেমন দেওয়া থাকে পাত্রপাত্রীর নাম ও পরিচয়, তেমনভাবে এই বিপুল বর্ণাঢ্য উপন্যাসের গোড়াতেই যদি দেওয়া থাকত নবীনকুমারের সমকালীন চরিত্রাবলির নাম, বস্তুতই বিস্ময়কর মনে হত সেই তালিকা। মাইকেল, বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও, হেয়ার সাহেব, দেবেন ঠাকুর—কে নেই। সমগ্র ঊনবিংশ শতাব্দীই যেন নানান চরিত্র হয়ে চোখের সামনে জীবন্ত।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।