দ্য রুম অন দ্য রুফ
চিলেকোঠার ঘর
রাস্কিন বন্ড
The Room On The Roof
Ruskin Bond
প্রথমেই বলে রাখি এটা পাঠ প্রতিক্রিয়া নয়, এটা পাঠানুভূতি, কারণ এই উপন্যাসের পাঠ প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।
সে এক স্বপ্নের উপন্যাস। এক ব্যথাদীর্ণ কিশোরের লেখা আবেগ-আখ্যান।
1950 এর দেরাদুন, আর সদ্য কিশোর রাস্কিন বন্ড। এই উপন্যাসের পোশাক বিষণ্ণতা, এক পথভ্রষ্ট রাজকুমার যেন তাঁর জাদু কলমে এই উপন্যাস লিখেছে।
এই উপন্যাস আমি প্রথম পড়ি কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে, বাড়িতেই ছিল বইটা।
এই পাতলা বইটা আমি প্রথম শুরু করি এক বর্ষণ-মুখর দুপুরে, দ্বিপ্রাহরিক আহারের পর, এবং কখন যে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয় খেয়াল নেই।
সেই শুরু, তারপর থেকে আজ অব্দি বহু বার ফিরে গেছি এই বইয়ের কাছে, এর অমোঘ আকর্ষণ আমাকে অসহায় আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে এবং সাম্প্রতিকতম আত্মসমর্পণটি ঘটেছে গত কাল।
এই উপন্যাসের কাহিনীটি খুব সহজ, সরল।
অনাথ রাস্টি, জন হ্যারিসন নামক একজন অভিভাবকের অধীনে বাস করে, কিন্তু অভিভাবক অত্যাচারী এবং বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে দেখা যায় যে রাস্টি সেই বাড়ী ছেড়ে দেয় এবং সোমি, রণবীর ও আরো নানান বর্ণিল চরিত্রের সাথে রাস্টির মোলাকাত হয়। রাস্টির জীবনের স্বপ্ন হলো বিখ্যাত লেখক হওয়ার, নিজেকে সে লেখা শেখাচ্ছে এই উপন্যাস জুড়ে।
এক বন্ধুর কাছে আশ্রয় নেয় রাস্টি এবং গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য কিষেন নামের একটি ছেলেকে পড়াতে শুরু করে, গৃহশিক্ষক হিসাবে, আর তার সাথে চলে লেখক হওয়ার প্রচেষ্টা এবং এখানেই ছাত্রের মায়ের প্রতি রাস্টি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, জীবনের প্রথম প্রেম, কৈশোরের চিরাচরিত আকর্ষণ পূর্ণ যৌবনা নারীর প্রতি এবং তারপর........ নাহ, তারপর বললে আর পড়ার মজা পাবেন না তাই আপাতত গল্পটা এখানেই থামালাম।
এই উপন্যাসটির আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো যে সাধারণত আমরা দেখি লেখক তাঁর পরিণত বয়েসে গিয়ে কিশোর চরিত্রদের নিয়ে উপন্যাস লেখেন অথবা নিজের কৈশোর কে ফিরে দেখেন; সেই ফিরে দেখার মধ্যে অনেকটা বাৎসল্য লুকিয়ে থাকে এবং নস্টালজিয়া থাকে অনেকখানি। কিন্তু এই উপন্যাসের নায়ক ও লেখক দুজনেই সমবয়সী, অর্থাৎ রাস্কিন বন্ড নিজের প্রথম উপন্যাস লিখেছেন 17 বছর বয়েসে এবং সেই জন্য এর মধ্যে কোনো "ফিরে দেখা" নেই, যা আছে তা হলো প্রায় দিনলিপির মতো টাটকা আবেগ এবং অনুভূতি। সেই অনুভূতি এবং আবেগ আজও আমাদের সমান ভাবে নাড়া দেয় কারণ অনুভূতি গুলো চেনা, আর দুঃখ গুলো জানা।
এই উপন্যাসের জন্য রাস্কিন বন্ড 1957 সালে John Llewellyn Rhys Memorial Prize পান এবং প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পরবর্তী কালে এই পুরস্কার জেতেন আরেক বিখ্যাত লেখক ভি এস নাইপল।
এই উপন্যাসের মূল ঐশ্বর্য্য হলো এর ভাষা। এরকম চিত্রময়, হিরণ্ময় গদ্য আমি অন্তত খুব বেশী পড়ি নি।
ভারতীয় মার্গ সংগীতে বলা হয় যে গলা গরম হওয়ার আগে তানের কেরামতি দু একজন ক্ষণজন্মা শিল্পী ছাড়া কেউ পারেন না, একই কথা সাহিত্যর ক্ষেত্রেও সত্যি; কোনো লেখককে তাঁর নিজস্ব ভাষা, বাচনভঙ্গী খুঁজে পেতেও অন্তত কয়েকটা উপন্যাস অপেক্ষা করতে হয়, কিন্তু এখানেই রাস্কিন বন্ড ব্যতিক্রম, তাঁর প্রথম উপন্যাসের সর্বপ্রথম বাক্যটিই নির্ভুল বন্ড-"the light spring rain rode on the wind, into the trees, down the road; it brought an exhilarating freshness to the air, a smell of earth, a scent of flowers; it brought a smile to the eyes of the boy on the road"
দেখুন প্রথম বাক্যটিই কেমন নিজস্বতায় উজ্জ্বল; বিশেষত rode এই ক্রিয়াপদটির ব্যবহারটা খেয়াল করতে বলবো।
Ride ক্রিয়াপদের অতীতকালে rode ব্যবহৃত হয়, ride মানে আরোহন, অথবা পিঠে চেপে আসা কোন কিছুর ; এই খানে রাস্কিন বলছে হাওয়ার পিঠে চেপে বৃষ্টি আসছে, যাঁরা যাঁরা পাহাড়ের বৃষ্টি দেখেছেন তাঁরা হলফ করে বলতে পারবেন যে এর থেকে সঠিক বর্ণনা আর সম্ভব নয়।
আর আছে এই উপন্যাসে প্রায় ডিকেন্সীয় রসবোধ, একটা উদাহরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না " when a large white butterfly settled on the missionary's wife's palatial bosom, she felt flattered, and allowed it to remain there. Her garden was beginning to burst into flower, giving her great pleasure-her husband gave her none-and such fellow-feeling as to make her tread gingerly among the caterpillars."
গোটা উপন্যাস জুড়ে প্রায় ঐশ্বরিক ভাবে ক্রিয়াপদের আর বিশেষণের ব্যবহার করেছেন ১৭ এর রাস্কিন, আনমনা, একা রাস্টি যখন প্রথম বন্ধুর সাইকেলে চেপে পাহাড় বেয়ে নামছে তখন দেখুন কী ভাষা "they rode slowly, gliding round the low hills....."
আবার দেখুন gliding এই ক্রিয়াপদটির কী ব্যতিক্রমী কিন্তু মোক্ষম ব্যবহার।
এই উপন্যাসের মধ্যে, তার অনাথ কেন্দ্রীয় চরিত্র, বিভিন্ন স্থানের বর্ণনা, সূক্ষ হিউমার এগুলো বেশ কয়েক জায়গায় ডিকেন্সের কথা মনে করাবে কিন্তু সেটা শুধুমাত্রই ছায়া, কোনো ভাবেই নির্লজ্জ অনুকরণ নয়।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।