Movie- Raksha Bandhan
Language- Hindi
Starring- Akshay Kumar, Bhoomi Pednekar
দেখলাম অক্ষয় কুমার ও ভূমি পেডনেকর অভিনীত "রক্ষা বন্ধন" সিনেমাটি।
গল্পটি আবর্তিত হয় এক ফুচকাওয়ালা ও তার চার বোনকে ঘিরে। মা মারা যাওয়ার সময় গল্পের নায়ককে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেন যে সে চার বোনের বিয়ে দেওয়ার পর তবেই নিজে বিয়ে করবে। নায়কও এই প্রতিজ্ঞা পালনে পরিকর। এদিকে নায়কের ছোটবেলায় প্রেমিকা তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্রমশই অধৈর্য্য হয়ে পড়ছে। কিন্তু নায়ক বোনেদের বিয়ে দিতে পারছে না কারণ পাত্রপক্ষের সাধ্যাতীত পণের দাবি।
অক্ষয় কুমার ইদানিং 'প্যাড ম্যান' এবং 'টয়লেট: এক প্রেম কথা'- র মত সামাজিক ব্যাধির ওপর সিনেমা করে স্বভাবতই দর্শকদের প্রত্যাশা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। 'রক্ষা বন্ধন'- ও পণ প্রথার মত একটি সামাজিক ব্যাধির কুফল নিয়ে তৈরী। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি যে উপরিউক্ত সিনেমাটি কোনো রকম প্রভাব ফেলতে অক্ষম। দেখলে মনে হবে যেন নির্মাতারা ভীষণ রকম আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে এই বিষয়ের ওপর সিনেমা তৈরী করলে লোকে দেখবেই, তাই যেমন তেমন করে বানিয়ে দিলেই চলবে। খারাপ লাগার কারণের তো শেষ নেই। তবুও সংক্ষেপে কয়েকটি মুখ্য দিক তুলে ধরার চেষ্টা করছি-
১. গল্পের প্রথম অর্ধাংশ ভীষণ রকম লাউড। চিৎকার চেঁচামেচি আর ব্যর্থ হিউমার দিয়ে পরিপূর্ণ। এখানেই সিনেমা ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করবে।
২. প্রত্যেকটা সিনের উপস্থাপন খাপছাড়া। কোনো একটা বিষয় দিয়ে মানুষের মনে দাগ কাটতে হলে যে গভীরতার প্রয়োজন, তার সিকিভাগও নেই। যে দৃশ্যে একজন মহিলা পণ প্রথা বন্ধ করার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন, তাকে অক্ষয় কুমার থামিয়ে দিয়ে বড় বড় ডায়লগ দিলেন আর মহিলাও কোনো যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা না করেই সুড়সুড় করে রণে ভঙ্গ দিলেন। সত্যিই কি সোস্যাল এক্টিভিস্টরা এত ভীতু হয়?
৩. পণ দিয়ে অনেক কষ্টে বোনের বিয়ে দেওয়ার পর বোন আত্মহত্যা করে। এইরকম একটা দৃশ্যকে যে কত দুর্বলভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে তা এই সিনেমায় দেখা যাবে। মেয়েটির ওপর কী পরিমাণ অত্যাচার হত তা একজন প্রতিবেশহে চেঁচিয়ে কয়েক সেকেন্ডে বলে দেবেন। ব্যস, হয়ে গেল। এই জায়গায় ভীষণ রকমের স্কোপ ছিল অত্যাচারের দৃশ্যায়নের মাধ্যমে জনমানসে প্রভাব ফেলার। কিন্তু নির্মাতারা অত কষ্ট করার দিকে যাননি।
৪. শেষ পর্যায়ে এসে ভূমির বিয়ে ভাঙার বিষয়টা অসম্ভব রকমের অতিরঞ্জিত, অযৌক্তিক ও বিরক্তিকর ছিল। কেন? মানে কেন? বিয়ে ভাঙার জন্য মন্ডপ অবধি গিয়ে পাঁচ পাক ঘুরে ড্রামা করতেই হবে? বিয়ের আয়োজনে খরচা নেই? মধ্যবিত্ত বাবা বিয়ের মন্ডপে গিয়ে তবেই মেয়ের মন বুঝতে পারলেন? মেয়ে বারেবারে যখন বলছিল তখন বুঝতে পারেননি? বাবা মেয়ের সম্পর্ক এতই দুর্বল?
৫. কিডনির অপারেশন হওয়ার পর হসপিটাল থেকে ছাড়া পাওয়ার দিনই মানুষ রাস্তায় দৌড়াচ্ছে। যত বড় শকই পাক না কেন, সে তো উল্টে যাবে। তারপর ওই অবস্থাতেই মৃতা বোনের ভারী শরীর কোলে করে বয়ে আনছে। মানে যুক্তি তর্ককে বোধহয় নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল।
৬. এই সিনেমায় আমার সব থেকে খারাপ লাগা অন্যতম একটি দিক হল যে মা হোক কিংবা বাবা, তারা কোনো অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি চাইলে তা দিতেই হবে? মা বাবাও মানুষ, ভুল তাদেরও হতে পারে। ছেলে যখন প্রায় যুবক তখন ছোট মেয়ে বছর খানেকের। সেই ছেলের কাছে মা প্রতিশ্রুতি চাইল যে চার বোনের বিয়ে দিয়ে তবেই বিয়ে করবে সে। মাও ভাবল না যে ছেলে তো ততদিনে থুরথুরে বুড়ো হয়ে যাবে, সে আর বিয়ে করে করবেটা কী! ছেলেরা কি মানুষ নয়? ছেলেদের জীবনের কোনো দাম নেই? তাদের আশা আকাঙ্খা, ইচ্ছা কিচ্ছু থাকতে নেই?
আর মহান ছেলেও মায়ের প্রতিশ্রুতি রাখতে নিজের প্রেমিকাকে বলে যাচ্ছে- অপেক্ষা কর... অপেক্ষা কর...
এই ছেলে মহান হতে পারে কিন্তু প্রেমিক হিসেবে অত্যন্ত স্বার্থপর। অযৌক্তিক যা তা স্বয়ং ভগবান বললেও অযৌক্তিক।
৬. আমার সবথেকে যেটা খারাপ লেগেছে- "হামারে ঘর লড়কিয়া দহেজ দেতি নেহি, লেতি হ্যা"। আহ, কী ডায়লগ। মনে হচ্ছিল যে লিখেছে তার চরণধূলি নিই। কেন, ছেলেরা পণ দিলে কি পণটা পণ না হয়ে অন্য কিছু হয়ে যাবে? নায়ক বোনেদের পড়ার জন্য এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করছে কেন? না বোনেরা যাতে পণ নিতে পারে, তাদের জন্য দিতে না হয়। যাতা ডায়লগ লেখার সব সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে এই পর্যায়ে। আমি যদি খুব ভুল না করি, থাইল্যান্ডে ছেলেদের বিয়েতে পণ দিতে হয়। তার জন্য ছেলের বাড়িকে ঘটি বাটি অবধি বেচতে হয় অনেকসময়, তবুও শেষ মুহূর্তে বিয়ে ভেঙে যায়। পার্থক্য এটাই যে এখানে যেমন বিয়ের পরও পণের জন্য মেয়েরা অত্যাচারিত হয়, ওখানে সেটা হয় না। কিন্তু পণ প্রথা ছেলে হোক কী মেয়ে, সবার জন্য খারাপ। সিনেমায় সেটা একবারও উল্লেখ করা হলে একটু হলেও খুশি হতাম।
যাইহোক, একমাত্র ভালো লাগার জায়গা ছিল ভূমি পেদনেকরের অভিনয় এবং ওনার চরিত্রের যে আবেগ, কষ্ট, অনুভূতি দেখানো হয়েছে তা একদম যথোপযুক্ত। এছাড়া ভাল লাগার মত আর কিচ্ছু নেই, গানগুলো অবধি ভাল নয়। বহুদিন কোনো সিনেমা দেখে এতটা বিরক্ত হইনি।
রেটিং- ২/১০।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।