নরক সংকেত (রুদ্র প্রিয়ম সিরিজ)
লেখিকা- দেবারতি মুখোপাধ্যায়
https://authordebarati.com
প্রকাশনা ও প্রথম প্রকাশ-বুকফার্ম (২০১৭সাল)
এই দুঃসময়ে আর এক দুঃসাহসিক কাহিনী পড়ে ফেললাম সদ্য লেখালেখিতে আসা এবং প্রথম উপ্যনাস ও বই "ঈশ্বর যখন বন্দী" এর অসামান্য প্রতিভাবান লেখিকা দেবারতি মুখোপাধ্যায় এর দ্বিতীয় বই তথা লেখা 'নরক সংকেত'।
এই রুদ্ধশ্বাস, টান টান উত্তেজনা ও নানান ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে ভরপুর উপ্যনাস টাকে আমি মাস্টারপিস বলতে বাধ্য হচ্ছি।
একি সাথে বর্তমান একি সাথে অইতীতের নরক এর মুন্ডু হিটলার এর অসামাজিক নারকীয় ক্রিয়াকলাপ এর বর্ননা এত সহজ ভাষায় ও নিরলস ভাবে বর্ননা। আমার দারুন অবাক করেছে
এই উপ্যনাস আগের উপ্যনাস এরই মতো প্রধান রুদ্র, তবে রুদ্রাণী ওরফে রুদ্র বলে তরুণীটি কোনো পেশাদার গতানুগতিক গোয়েন্দা নয়, সাধারণ চাকুরীজীবী আধুনিক যুগের এক শিক্ষিতা ও তার স্বামী এক সাধারন বিদেশে ট্রান্সফার হওয়া চাকুরিরতা প্রিয়ম।
এখানে এরা সদ্য লন্ডনে এসে পড়ে এক ভয়াবহ জাল ও চক্রান্তে যার ফলে ধব্বংস হয়ে যেতে পারে গোটা ইউরোপ।
'ইউজেনিক্স' নামম এক জীন মডিফায়ার দিয়ে অতিমানব বানিয়ে পৃথিবী কে দাস ও রাজা এই দু ভাগে ভাগ করা পরিকল্পনা ও।
খোদ লেখিকার ভাষায়, "আগাগোড়া ইউরোপীয় পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাসে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ঘটে চলা সম্ভাসবাদ, মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থী সমস্যার সঙ্গে সমান্তরালভাবে আমি আঁকতে চেয়েছি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক এবং ওইপনিবেশিক ডামাডোলে বিধ্বস্ত জার্মানির চালচিত্র, অ্যাডলফ হিটলারের রাজনৈতিক কেরিয়ারের প্রথমদিক এবং এক অধুনালুপ্ত প্রাচীন সমাজ ওলটপালট করে দেওয়া ইউজেনিক্স তত্তবের প্রয়োগ"
লেখিকা এই ঐতিহাসিক কালজয়ী মূল্যবান রত্নটি তৈরির জন্য যারপরনায় পরিশ্রম করেছেন এবং এ কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন তার লেখা বইয়ে এই উপন্যাস লেখার জন্য আমাকে বহু সময় ধরে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে, কৌতূহল নিবারণে আমি দিনের পর দিন স্টেট সেন্টাল লাইব্রেরিতে গিয়ে বিভিন্ন বই চেয়ে স্টাফেদের বিরক্ত করেছি, জানার আগ্রহে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, বিশেষত জার্মানির বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ এবং সংগ্রহশালাতেও হানা দিয়েছি। আর সেইসঙ্গে ভগ্নও পেয়েছি তথ্য জানার নেশায় উপন্যাস যেন তথ্যভারে জর্জরিত না হয়ে পড়ে, এর রোমাঞ্চে যেন কোনো ঘাটতি না হয়। "
হিস্টোরিকাল ফিকশন সঙ্গে থ্রিলার এর জন্য "নরক সংকেত" এখনো পড়েননি?
প্লিজ পড়ে ফেলুন, সময় নষ্ট না করে। ইতিমধ্যেই চারটি মুদ্রন বের হয়েছে বইটির। চট পট অর্ডার দিয়ে ফেলুন এক্ষুনি।
রিভিউটি লিখেছেনঃ দীপু আলনূর www.fb.com/dipu.alnur
বই- নরক সংকেত
লেখিকা- দেবারতি মুখোপাধ্যায়
"কেইন স্লেচটেস ব্লাট ইন ইউরোপা!" ("নো ব্যাড ব্লাড ইন ইউরোপ!")
দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের লেখার সাথে প্রথম পরিচয় আগের বছর এই লকডাউনেই, 'ঈশ্বর যখন বন্দী'-র হাত ধরে। খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম বলবো না, তবে একজন লেখিকার প্রথম বই হিসেবে বেশ ভালো লেগেছিল। বৌদ্ধধর্মের বজ্রযান শাখা, রিনপোচে পদ্মসম্ভব, ভুটানের পর্যটন সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম। যাই হোক, প্রথম বই পড়ে যে অসন্তোষ বা খামতিগুলো মনে হয়েছিল, সেগুলো অনেকটাই পাল্টে দিলো এই দ্বিতীয় বই। 'নরক সংকেত'।
একদিকে হিটলারের সমসাময়িক ঘটনাবলী, একদিকে রুদ্র প্রিয়মের গল্প- প্রথম থেকেই সমান্তরাল খাতে বয়েছে, আর তাদের মধ্যে অবশ্যই যোগসূত্র হিসেবে দাঁড়িয়ে থেকেছে 'ইউজেনিক্স' নামক এক সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনা কারোর কাছে ক্ষমতার লোভের, কারোর কাছে ক্যান্সারমুক্ত পৃথিবী গড়ার। টানটান লেগেছে বেশ গল্পের প্রবাহ।
দেশপ্রেমের নজির দেখেছি সাংবাদিক গার্লিক, কাল্পনিক চরিত্র ফ্রেডরিক, পুলিশ অফিসার জিমি- এদের মধ্যে; আগের বারের মতো এবারেও জানতে পেরেছি টুকরো টুকরো নানা অজানা কথা যেমন, ভিক্টোরিয়ান হাউস, গ্যাস চেম্বারের বর্ণনা, জার্মান পদবীর ইতিহাস।
তবে, হয়তো পাঠক হিসেবে আমার অর্বাচীনতার জন্যই, একটা ব্যাপার বুঝতে পারলাম না ঠিক; ফ্রেডরিক ঐ গ্যালটনের গবেষণা থেকে ডিকোড করা কাগজগুলো নষ্ট করে দিলেও, ওর তোলা ছবিগুলো নষ্ট না করে এক দুর্গম স্থানে লুকিয়ে রাখতে গেল কেন!
চরিত্রদের মধ্যে, 'ঈশ্বর যখন বন্দী'র প্রিয়মকে কিন্তু 'নরক সংকেত' এর প্রিয়মের থেকে অনেক বেশি smart মনে হয়েছিল। সেই তুলনায় প্রিয়মকে বড্ড ফিকে লাগলো এখানে। শুধু শেষে মৃত প্রতিনায়কের থেকে ছবির খাম দু'টো বের করে আনা ছাড়া।
তবে মোটের ওপর 'নরক সংকেত' একটা খুব ভালো অভিজ্ঞতা দিলো, হিটলারের শুরুর দিকের জার্মানির সঙ্গে বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার সাদৃশ্য মনে করিয়ে দিলো "History repeats itself"; এরপর 'অঘোরে ঘুমিয়ে শিব'-এর পালা। লেখিকার আগামী বইগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Souvik Sadhukhan:
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।