মিথ্রিডেটিস by সায়ন্তনী পুততূন্ড

মিথ্রিডেটিস by সায়ন্তনী পুততূন্ড

বই: মিথ্রিডেটিস
লেখিকা: সায়ন্তনী পুততূন্ড 


বাংলায় এক প্রবাদ প্রবচন রয়েছে, "বিষে বিষে বিষক্ষয়", যদি একজনকে ছোট্ট বয়স থেকেই একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ মাত্রায় বিষপ্রয়োগ করা হয়, তবে একটা সময় পরে তার দেহ হয়ে ওঠে এক বিষ প্রতিরোধী অভদ্যবর্ম, কোনো রকম সাংঘাতিক বিষাক্ত বিষও তার শরীরে কোনোরকম কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনা, সে হয়ে ওঠে মিথ্রিডেটিস।

       স্টারলাইন নামক কলকাতার এক বিখ্যাত নার্সিংহোমে লোকচক্ষুর আড়ালে হয়ে চলেছে "ইললিগাল মেডিক্যাল ট্রায়াল"। ফুটপাথবাসী বুভুক্ষু মানুষদের খাবারের লোভ দেখিয়ে তাদের সামান্য কিছু রোগ নিরাময়ের জন্য তুলে নিয়ে যাচ্ছে সেই নার্সিংহোমে কিছু তথাকথিত এজেন্টরা। যে মানুষগুলোর কাছে দু' বেলা দু'মুঠো খেতে পাওয়াই অনেক বড় ব্যাপার। তারপর লেপ্রসি, এইচ আই ভি নামক ভয়ঙ্কর রোগের স্টেইন তাদের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেখা হচ্ছে সেই ড্রাগ রোগকে নিরাময় করতে পারে কিনা। কিন্তু ফল হচ্ছে হিতে বিপরীত, অধিকাংশ মানুষ সেই ড্রাগের প্রভাব নিতে না পেরে মারা যাচ্ছে কিংবা শরীরে দেখা দিচ্ছে সেপটোসেমিয়া... ভয়ঙ্কর ঘা তে ভরে যাচ্ছে সারা শরীর। নিরুপায় ডাক্তার, সিস্টার রা কেউই ড্রাগের ডোজ কমাতে পারছেন না কারণ অথরিটির আদেশ। এর মাধ্যমে লেখিকা তুলে ধরেছেন এক নৃশংসতা, ইললিগাল মেডিক্যাল ট্রায়াল যা এক অনেক বড় ক্রাইম।
       
       এবার সেই অথরিটি গিনিপিগ স্যাম্পেল হিসাবে খুঁজে নেয় এক অপরাধ জগতের দাগি আসামী মিথ্রিডেটিসকে, যার দেহে পূর্ব থেকেই তৈরি রয়েছে বিষপ্রতিরোধী ইমিউন সিস্টেম, কারণ সে মিথ্রিডেটিস, পয়জন প্রুফ। কিন্তু এবার যদি সেই মিথ্রিডেটিসের দেহে চলতে থাকে এই বিদেশী কোম্পানির মারণ ঔষধের প্রয়োগ, তবে কি হবে? তার দেহের এতদিনে তৈরি অভদ্যবর্ম কি একটু একটু করে ভেঙে পড়বে? মিথ্রিডেটিসের দেহে এই মারণ বিষের প্রয়োগ কি তার দেহে সঞ্চিত বিষ কে ক্ষয় করে চলবে? কি হবে তার পরিণতি? রাস্তা, বস্তি থেকে তুলে নিয়ে আসা মানুষগুলোরই বা শেষ পরিণতি কি হতে পারে? তারা কি বেঁচে বেরোতে পারবে এই মৃত্যুফাঁদ থেকে? 

      থার্ড ওয়ার্ল্ড দেশগুলিতে যে অবৈধ মেডিক্যাল গবেষণা বা চিকিৎসার নামে মানুষকে গিনিপিগ বানিয়ে নতুন ওষুধ বানানোর যে নোংরা খেলা চলে তারই একটা ছোট্ট অংশ লেখিকা তার বইয়ের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। মেডিক্যাল থ্রিলারের সাথে পিৎজায় থাকা এক্সট্রা চীসের মতন এক চোরা ফল্গুধারার মতন ভালোবাসার কাহিনী পাঠককে বইয়ের সাথে বেধে রাখবে শেষ পাতা অবধি। ইচ্ছে করেই পাঠ প্রতিক্রিয়ায় জানালাম না কে এই মিথ্রিডেটিস, তার নামের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, তার আসল নামের পৌরাণিক গুরুত্ব, তার জীবনের ভালবাসার মানুষটার কথা। পাঠকরা পড়তে পড়তেই খুঁজুক না হয় সেটুকু...

    তবে গল্পের গতি একটু ধীর লেগেছে আমার, মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে প্রতিটি লাইন। চরিত্রায়ন এবং গল্পের গাঁথুনি ভালো। বইয়ে মেডিক্যাল টার্মগুলো খুব খটোমটো লেগেছে, অবশ্য আমি কোনোকালেই ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি তে ভালো ছিলামনা, তাই হয়তো এটা স্বাভাবিক।

     মেডিক্যাল থ্রিলার বলার চেয়ে বলা ভালো এ এক অমোঘ নিয়তির গল্প, যাকে এড়ানোর কোনো উপায় কারোর নেই ---- "যে মুহুর্তে বিষমাখা ইঞ্জেকশনটি আপনি তৈরী করলেন কারো জন্য, জানবেন আপনার জন্যও আরেকটি বিষাক্ত সিরিঞ্জ প্রস্তুত হচ্ছে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও।"

বইঃ মিথ্রিডেটিস
লেখিকাঃ সায়ন্তনী পূততুন্ডু

কর্ণ বা করণ ডিস্যুজার ফাঁসির আদেশ হয়ে গিয়েছিল। কলকাতার এক টপ টেররকে কারাগার থেকে বের করে আনলো এক ছায়া। কে এই ছায়াময়? জানার আগেই করণ নিজেকে আবিষ্কার করলো আরেক জেলে, স্টারলাইনের নার্সিংহোমে! তাকে ভীষণ প্রয়োজন ওদের, ওষুধগুলোর কার্যকারিতা বোঝার জন্য। করণ যে একজন মিথ্রিডেটিস!
মিথ্রিডেটিস" শব্দ টির অর্থ হলো পয়জন প্রুফ। কলকাতার একজন নামকরা গ্যাংস্টার, যাকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে। সেই করণ ছোটবেলা থেকে নিজের অজান্তেই তার বাবা উইলিয়াম ডিস্যুজার দেওয়া বিষের মিশ্রণ খেতে খেতে হয়ে উঠেছিল মিথ্রিডেটিস। অর্থাৎ সাধারণ কোনো বিষ শরীরে ঢুকলেও কোনো ক্ষতি তার হবে না।
অপরদিকে স্টারলাইন নামক কলকাতার এক বিখ্যাত নার্সিংহোমে লোকচক্ষুর আড়ালে হয়ে চলেছে "ইললিগাল মেডিক্যাল ট্রায়াল"। ফুটপাথবাসী বুভুক্ষু মানুষদের খাবারের লোভ দেখিয়ে তাদের সামান্য কিছু রোগ নিরাময়ের জন্য তুলে নিয়ে যাচ্ছে সেই নার্সিংহোমে কিছু তথাকথিত এজেন্টরা। যে মানুষগুলোর কাছে দু' বেলা দু'মুঠো খেতে পাওয়াই অনেক বড় ব্যাপার। 
সায়ন্তনী পূততুন্ডু, যে গল্পে তিনি মেডিক্যাল ট্রায়ালের মতো নির্মম বাস্তব দেখাচ্ছেন, সেখানে এই চরিত্র-বৈশিষ্ট্য বড়ই অসঙ্গতি সৃষ্টি করে। প্রোপার মেডিকেল থ্রিলার। তবে গ্রুপের বইটা আরেকটু ভাল স্ক্যান হলে আরো ভাল হতো। 
রেটিংঃ ৭.৫/১০

রিভিউটি লিখেছেনঃ BatMaN

Post a Comment

0 Comments