মেমসাহেব : নিমাই ভট্টাচার্য

মেমসাহেব : নিমাই ভট্টাচার্য

বই: মেমসাহেব 
লেখক : নিমাই ভট্টাচার্য 

মেমসাহেব শুনেই কি চোখের সামনে ভেসে উঠছে না সাদাচামড়ার এক বিদেশিনী? কিংবা বাংলারই এক শিক্ষিত অভিজাত নারী? কিন্তু নিমাই ভট্টাচার্যের মেমসাহেব কিন্তু কালো চামড়ার এক বাঙালি ছিলেন যার প্রেমে পড়ে ধন্য হয়েছিল লেখক। তিনি শিক্ষিতা ছিলেন বটে, মাসে কামাইও করতেন অঢেল। কিন্তু সাদা চামড়া না হওয়ার আক্ষেপ তার আজন্মই ছিল। সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছেন লেখক।

লেখকের চোখে তার কালো মেমসাহেবই ধরা দিলেন অসাধারণ মহত্ত্বে। তার স্নিগ্ধ চেহারা, টানা সরু ভ্রু, কাজল কালো হরিণসম চোখ, সুগঠিত তন্বী দেহ সৌন্দর্যের মাদকতায় উন্মাদ ছিলেন লেখক। প্রথম দেখাতেই নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসে ফেলে মেমসাহেবকে, যাকে আমরা বলি, 'Love at first Sight' 

'কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়া লক্ষ্মী নারী' কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই পঙ্ক্তিগুলো মেমসাহেবের বেলায় সম্পূর্ণ খাটে।  লেখকের জীবনের সকল উত্থান, সফলতা সব কিছুর পিছনে এই মেমসাহেবের অবদান। তার প্রেরণা না থাকলে লেখক ৫০ টাকার রিপোর্টার হয়েই জীবন অতিবাহিত করতেন খুব সাধারণ ভাবে। মেমসাহেবই তাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন, শৌর্য বীর্যের সাথে সফল হওয়ার প্রেরণা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন যে, 'ইচ্ছে থাকলে সব সম্ভব'  

১৯৭২ সালে মহানায়ক উত্তম কুমার ও অপর্ণা সেন অভিনয়ে মেমসাহেব চলচ্চিত্রও বের হয়, যা বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। পুরো বইটাই একটা চিঠি, যা লেখক বাচ্চু তার দোলাবৌদিকে লিখেছেন। নিমাই ভট্টাচার্যের নিজের জীবনের কিছু ছোঁয়া ও সমকালীন প্রেক্ষাপটে বইটি রচিত। বাচ্চু লিখেছেন মেমসাহেব কি করে তার জীবন পালটে দিয়েছেন, তাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়ে স্বপ্ন দেখা শিখিয়েছেন, বাঙালি হয়েও হলিউড ফিল্মের নায়ক নায়িকার মতো কিসব করেছেন, তার জীবনের সকল উত্থান, সাফল্যের পিছনে যার সম্পূর্ণ অবদান, সর্বস্ব দিয়ে যে সাহায্য করেছেন সেই গাঢ় শ্যামলা মেমসাহেবের কাহিনী। লেখকের পিছনে কত অভিজাত, সুন্দরী নারী ঘুরেছিল, তার একটু পরশ ছোঁয়া পাওয়ার জন্য কত সুন্দরীরা চেষ্টা করেছে, কিন্তু লেখক একমাত্র তার মেমসাহেবের প্রতিই আসক্ত ছিলেন।  তারা ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল, সুন্দর সুখী সংসারের, যা লেখক আজন্মকাল থেকে পাননি। কিন্তু শেষমেষ পরিনতি কি হয়? জানতে হলে পড়তে হবে অসাধারণ বইটি।

Post a Comment

0 Comments