বই- কে তুমি গর্ভহরণী
লেখক- প্রলয় কুমার নাথ
প্রকাশক- খোয়াই পাবলিশিং
সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রতিলিপিতে লেখক প্রলয় কুমার নাথ মোটামুটি পরিচিত নাম। মূলত গোয়েন্দা ও অতিলৌকিক গল্প উনি লিখে থাকেন। "কে তুমি গর্ভহরণী" সম্ভবত ওনার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। বইটিতে একটিই অতিলৌকিক উপন্যাস রয়েছে। চার ফর্মার এই উপন্যাসটি যথেষ্ট সুসজ্জিত।
বইটির সারসংক্ষেপ বলব না, কারণ বললে সাসপেন্স নষ্ট হবে। উপন্যাসের মূল প্রেক্ষাপট বাংলার একটি গ্রাম। এছাড়া ঘটনার প্রয়োজনে কখনও তুরস্ক ও কখনও কলকাতাতেও কাহিনী পৌঁছেছে। উপন্যাসটিতে সময়কালও স্থির থাকেনি, সময়কাল প্রয়োজন অনুসারে পাল্টেছে। উপন্যাসে যে গ্রামের উল্লেখ রয়েছে সেই গ্রামে একের পর এক গর্ভবতী বধূ প্রসবের সময় রহস্যজনক ভাবে মারা যায় এবং তার গর্ভস্থ সন্তানটিও নিখোঁজ হয়ে যায়। কানাঘুষোয় শোনা যায় এই প্রত্যেকটি বধূই নাকি গর্ভবতী অবস্থায় এক বৃদ্ধা ও তার পোষ্য কালো বেড়ালের দেখা পেয়েছিল। কে এই বৃদ্ধা আর কিভাবেই বা গর্ভবতী বধূরা মারা যাচ্ছে তা জানতে হলে উপন্যাসটি অবশ্যই পড়তে হবে।
ভালো লাগা:
১. প্রথমেই বলতে হয় বইটির ভাষা এবং বাক্যবিন্যাসের কথা। বর্তমানকালে বেশিরভাগ বইতে দেখি তাড়াহুড়ো করে লেখার ফলে বাক্য গঠনে গলদ রয়ে যায়। এই বইটি সেই ত্রুটি থেকে প্রায় মুক্ত। তাই পড়তে গিয়ে কোথায় চোখ আটকায়নি।
২. নির্মেদ লেখা বলতে যা বোঝায় উপন্যাসটি একদম তাই। সমগ্র উপন্যাস জুড়ে একাধিক ছোট ছোট ঘটনা রয়েছে কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত বর্ণনা দিয়ে লেখক উপন্যাসটিকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করেননি।
৩. কালো জাদু সংক্রান্ত বিষয়টি লেখক খুব দক্ষতার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। তিনি এই সমন্ধে পড়াশুনা করেছেন বলেই অকারণে পাতায় পাতায় নিজের জ্ঞান জাহির করার চেষ্টা করেননি। যেখানে বর্ণনা দেওয়ার প্রয়োজন সেখানে বর্ণনা দিয়েছেন এবং সেই বর্ণনা না থাকলে পাঠকের পক্ষে গল্পটি বোঝা সম্ভব হত না।
৪. বীভৎস রসের গল্প যেহেতু তাই বীভৎস দৃশ্যের বর্ণনা রয়েছে কিন্তু তা পরিমিত পরিমাণে। গল্পের প্রয়োজনে বীভৎস দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন, কিন্তু সেই বর্ণনা সর্বস্ব করে উপন্যাস খাড়া করার চেষ্টা করেননি। সর্বোপরি উপন্যাসটিতে একটি বা একাধিক ছোট ছোট কাহিনী রয়েছে- তার মধ্যে প্রেম, বিষণ্ণতা, অসহায়ত্ব, প্রতারণা ইত্যাদি বিভিন্ন স্বাদের ঘটনা চিত্রিত হয়েছে। ব্ল্যাক ম্যাজিক গল্পের মূল উপজীব্য বলে সমগ্র গল্প জুড়ে নেতিবাচক আবহাওয়া, গা ঘিনঘিনে দৃশ্য বা তন্ত্র মন্ত্রের উপাচার ছড়িয়ে নেই।
৫. আমি এই তন্ত্র মন্ত্র বিষয়ক গল্প পছন্দ করি না। পড়লে ভয় নয়, বিরক্তি লাগে। কিন্তু অস্বীকার করবে না যে খুব অল্প জায়গায় হলেও আমি শিহরিত হয়েছি।
৬. শেষের টুইস্টটা অপ্রত্যাশিত ছিল, অন্তঃত আমার কাছে।
মন্দ লাগা:
১. কালো জাদুর গল্পে এই মাকে হত্যা করে গর্ভস্থ সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার প্লট বহুল পরিচিত, তাই প্লট নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো অভিনবত্ব নেই। লেখক নিজস্ব লেখনীর গুণে অবশ্য গল্পটিকে উপভোগ্য করে তুলেছেন।
২. অস্বীকার করব না ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যটা পড়ার সময় একটু হাসি পেয়েছে কারণ হরর ফিল্মের ভি.এফ.এক্স যেন ভাষার মাধ্যমে লেখার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে হল। বেড়ালের চোখ থেকে রশ্মি নির্গত হওয়ার ব্যাপারটা পড়তে পড়তে চোখের সামনে ভেসে উঠছিল সেই পুরোনো দিনের সিনেমার ঠাকুরের মূর্তির চোখ থেকে যেমন রশ্মি বেরিয়ে মরা মানুষকে জ্যান্ত করে দিত বা ভিলেনের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিত সেই দৃশ্যের কথা। তাই সমগ্র গল্পের নিরিখে এই জায়গাটা বড় খেলো লেগেছে।
৩. যে গৃহবন্দি সে একলা কিভাবে এত কিছু ব্যবস্থা করে ফেলল, এত কান্ড করে ফেলল তার কোনো যথোপযুক্ত বর্ণনা দেওয়া নেই। এটা উপন্যাসের একটা লুপ হোল বলা যায়।
পরিশেষে বলব আমি কিন্তু উপভোগ করেছি বইটি। যারা এই বিষয়ক গল্প পড়তে ভালোবাসেন তারা নিশ্চিন্তে একবার পড়ে দেখতে পারেন।
রেটিং- ৭/১০
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।