কালীগুনীন ও ছয় রহস্য
সৌমিক দে
একটি রিভিউ তে অনেক প্রশংসা আর ভালো ভালো কথা দেখে বইটি পড়ব বলে ঠিক করেছিলাম, কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা একেবারে যাকে বলে জঘন্য। একেবারে নিম্ম মানের লেখা।
এবার রিভিউ তে আসি, খারাপ লাগা গুলোই বোধহয় আগে বলা দরকার...
প্রথমেই খারাপ লেগেছে লেখকের লেখনীর ভাষা, শুরুতেই পড়ার Mood নষ্ট হয়ে গেছে। শুরুতে ভূমিকাতে লেখা রয়েছে - "ছেলেবেলায় হারিয়ে যাওয়া পুরাতন বাঙলা, যে ভাষায় আমরা বিভূতিভূষণের লেখা পড়ে বড়ো হয়েছি, যে ভাষায় ঠাকুমার মুখে গল্প শুনে ঘুমিয়েছি, সেই ভাষাকে লেখক আবার ফিরিয়ে এনেছে ইট কাঠ পাথর কংক্রিটের জঙ্গলে" আমি জানি না লেখক কেন এই অনাবশ্যক প্রচেষ্টা করেছেন। ধরুন আপনি হিন্দি ভাষাতে কোনো গল্প লিখছেন, তার জন্য আপনার পুরো হিন্দি ভাষা জানা এবং রপ্ত থাকা দরকার, শুধু একটা দুটো হিন্দি শব্দ জানলে চলে না। দ্বিতীয় কথা যেকোনো ভাষায় কোনো রচনা লিখতে গেলে সেই ভাষার সঠিক ব্যবহারিক প্রয়োগ ও জানতে হয়, যেমন প্রথম গল্পে একটি লাইন আছে যে "নীচ জেতের ছেলে হয়ে এতোবড় ধৃষ্টতা না দেখানোই মঙ্গল" ... বলুন তো এটা কি ঠিকঠাক হজম করা যায়, এদিকে আপনি লিখেছেন 'নীচ জেতের ছেলে' আবার তার সাথে লিখছেন 'ধৃষ্টতা' , তাই বললাম যে কোনো ভাষায় লিখতে গেলে শুধু একটা দুটো শব্দ জানলে চলে না আর এই অনাবশ্যক প্রচেষ্টাটা না করলেও চলত।
আর লেখক কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন যা বোধহয় ১০০ বছর আগে ব্যবহার হত, সেটাকে লেখক ঠাকুমার মুখে গল্পের ভাষা বলে চালিয়ে দিয়েছেন, যাইহোক এগুলো ব্যবহারের ফলে গল্প কোনরুপেই সুন্দর বা ভয়াবহ রূপ (যেহেতু তন্ত্র মন্ত্র এবং ভৌতিক বিষয় নিয়ে গল্প) ধারণ করেনি শুধু পড়ার সময় গতিপথ রোধ হয়েছে মাত্র যা একেবারেই কাম্য নয় । আর আমি ঠিক জানি না বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এইরকম ভাষায় কোনো গল্প লিখছেন কি, মানে ভাষার এরকম খিচুড়ি করে।
YouTube channel এর ক্ষেত্রে একটা কথা খুব প্রচলিত আছে এবং বর্তমানে সিনেমার জগতেও বেশ প্রচলিত হয়েছে, "Content is King" । আপনার Camera, Setup, Studio ....যতই ভালো হোক Content ভালো না হলে সব বেকার, ঠিক সেরকমই বইয়ের প্রচ্ছদ, ভূমিকা যতই জবর হোক আসলে ভিতরে তো ফাঁপা। লেখক শুধুমাত্র লেখনীর মাধ্যমে সমস্ত ভুল ত্রুটি ছাড়িয়ে যেতে পারতেন কিন্তু তা হয়নি। বিশ্বাস করুন বইয়ের প্রতিটি গল্প ৫-৬ বাক্যের মধ্যে এসে যায়, যেমন যদি প্রথম গল্প "কানাওলার ফাঁদ" -এর বিষয়ে বলি, "প্রবঞ্চনার বা বেইমানির স্বীকার হয়ে কোনো মানুষ বা বুদ্ধিমান জন্তু দ্বিপাদ, ত্রিপাদ বা চতুষ্পাদ দোষ পেয়ে মারা গেলে হয় কানাওলা" (যদিও আমি জানি না লেখক বুদ্ধিমান জন্তু বলতে কোন জন্তুকে বুঝিয়েছেন আর এটাও আমার ধারণার বাইরে যে একটা জন্তু কীভাবে বেইমানির স্বীকার হয়ে মারা যায় 🙄 আর কোনো জন্তু কীভাবে মারা যাওয়ার পর দোষ পায়)। তো গ্ৰামে একজন নীচু জাতের ছেলে হারান ওই গ্ৰামের একজন ব্রাহ্মণ মেয়ের প্রেমে পড়ে, যার বিয়ে ওই গ্ৰামেরই একটি ছেলের সাথে ঠিক হয়ে রয়েছে। তো হারান মেয়েটিকে বিয়ে করার জন্য একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলে, তারপর হারানকে ভুল খবর দিয়ে কোলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয়, সেই ফাঁকে গ্ৰামে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। হারান কোলকাতা থেকে ফিরে এসে তা জানতে পেরে নদীর ধারে একটি গাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। তারপর সে হয় কানাওলা হয় এবং একের পর এক গ্ৰামবাসীকে হত্যা করতে থাকে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী কালী গুনীন এসে তাকে বন্দী করে ফেলে। বিশ্বাস করুন এইটাই গল্প, এর থেকে বেশি আর কিচ্ছু নেই।
গল্প লেখার সময় একটা যে অযৌক্তিক ও অবাস্তবতার সীমা থাকে লেখক সেই ছাড়িয়ে গেছেন এবং এমনভাবে ছাড়িয়ে গেছেন যে পচা গন্ধ টের পাবেন পড়ার সময়। দিনের আলোতে গ্ৰাম ভর্তি লোকের সামনে প্রেতাত্মা (যদিও প্রেতাত্মা বলব ভূত বলব না প্রানী বলব সেটাই বুঝতে পারিনি) এসে কালী গুনীনের সাথে লড়াই করছে , বলুন তো এটা কি মানা যায়। ভূত তো আর গুন্ডা নয় যে দিনেরবেলা গ্ৰাম ভর্তি লোকের সামনে এসে লড়াই করবে।
গল্পগুলি পড়ার সময় আপনার ছোটোবেলায় Tv বা Mobile -এ দেখা ঠাকুমার ঝুলি Cartoon -এর কথা মনে পড়বে। মনে হবে এই গল্পগুলি থেকেই বোধহয় ঠাকুমার ঝুলি cartoon বানানো হয়েছে। Literally, মানে ভূত কখনো একঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিচ্ছে মানুষকে কামড়ানোর জন্য আবার কখনো একদল বিড়াল পাঠিয়ে দিচ্ছে, এসব ঠাকুমার ঝুলি ছাড়া আর কোথায় দেখতে পাওয়া যায়। আর ভূতকে বোকা বানানোর ঘটনাগুলো না বলাই ভালো, হাসবেন আপনারা, মানে ঠাকুমার ঝুলিতে নাপিতের আয়না দেখিয়ে ভূতকে বোকা বানানোর কাহিনী ও এর থেকে অনেক ভালো।
ভালো লাগার কথা বললে ১২-১৪ বছরের নীচের বাচ্চাদের বেশ ভালো লাগবে। প্রচ্ছদ আর ভূমিকা ও দেখলাম বেশ জবর।
*মতামত ব্যক্তিগত
review
বই:- কালীগুণীন ও ছয় রহস্য
লেখক :- সৌমিক দে
প্রকাশনী:- বিভা পাবলিকেশন
কি জাতীয়:- তন্ত্রভৌতিক
পর্যালোচক:-Sourav Mukherjee (@Se7en89)
প্রচ্ছদ:- গল্প গুলির বিষয়বস্তুর বিবরণ অনুসারে যথাযথ। কালী গুণীন এর আকৃতির একটি সুন্দর ধারণা পাওয়া যায় প্রচ্ছদটি থেকে। অঙ্কিত অপশক্তি গুলি মনে ভয় ধরানোর মত না হলেও, অন্ধকারের অশুভ বার্তা বহন করে আনে।
কবিগুরুর লেখায় দেখা শান্ত সুন্দর গ্রাম্য পরিবেশ। গায়ের বধূ সকাল বেলা ঘর নিকিয়ে জলের কলসী ভরতের দল বেঁধে দিঘীর দিকে ধাবমান। রাখাল বালক তার গৃহপালিত পশুর দলকে মাঠে ছেড়ে গাছের তলায় তার বাশিতে মত্ত। গ্রামের নাটমণ্ডপের চাতাল ভরে গ্রামের বয়স্করা বিষয়- আশয় ও নানান কথাতে ব্যস্ত। চাষের জমি আলো করে রক্ত-ঘামের মূল্যের সোনার ঝলকানি। গ্রামের সকাল নিজেকে হারিয়ে তাকিয়ে হাটফেরতা গ্রাম্য দোকানী ও তার খদ্দেরদের উপর। আস্তে আস্তে বিকাল রাখাল ও তার গরু-বাছুরের দলের সাথে সাথে গ্রামের ভিতরের প্রবেশ করলে সন্ধ্যার আগমন ঘটে। আলোর পরে অন্ধকারে রাজত্বের শুরু। এই নির্মল, সরলা গ্রাম রাতের প্রবেশের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় অজানা-অচেনা নানা আশঙ্কার পটভূমিতে। এই সব নানান অপশক্তির সৃষ্টি মানুষেরই লোভ, হিংসা, না পাওয়ার ব্যর্থ কষ্টের জিংঘাসার ফল সরূপ। সাধারণ গ্রাম্য মানুষ ও তার জীবনযাত্রা ধংসের দিকে এগিয়ে যায় এরকমই নানান অপশক্তির বাধাহীন তান্ডবের ফলে। অন্ধকারের অতলে তলিয়ে যেতে থাকা গ্রামের মানুষের সব চেষ্টার শেষে আশার আলোর মশাল হাত এসে দাড়ায় একটি মানুষ:- ব্রাক্ষণ। নাম- কালীপদ মুখুজ্জে। নিবাস- রায়দীঘড়া। এর পর হয় অপশক্তির সাথে শুভশক্তির লড়াই। শুভশক্তির সাথে কালীগুণীনের ক্ষুরধার বুদ্ধির যোগে রাগে উত্তর অপশক্তি বা ভৌতিক রূপের পরিসমাপ্তি ঘটে। বইটির ছয়টি গল্পই কম-বেশি এই ঘটনারই পরিবর্তিত রূপ। তবু সহজ সরল লেখা কিশোর থেকে পরিনত পাঠক সকলের জন্যই উপযোগী। আগে উল্লেখিত কালীগুণীন মহাশয়র ট্রেডমার্ক লাইনটি ছয়টি গল্পেতেই একই রকম পরিস্থিতিতে আসার ফলে একটু হাসির সৃষ্টি করলেও লাইনটির আসার অপেক্ষায় থাকাটাও একটু মজার পাওনা হিসাবেই প্রাপ্তির দলে যোগ হয়।
রেটিং :- তারানাথ তান্ত্রিকের সাথে তুলনা না করে তার একটি একলব্যের সমতূল্য শিষ্য হিসেবে ১০ এর মধ্যে ৭ দিলাম।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Sourav Mukherjee
review
কালিগুনিন ও ছয় রহস্য
সৌমিক দে
Review লেখা শুরু করার আগেই বলে রাখি এটা আমার লেখা প্রথম review, তাই কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন।
বইটির নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে বইটিতে মোট ৬টি গল্প রয়েছে। এই ছয়টি গল্পই কোনো না কোনোভাবে অলৌকিক বা অতিলৌকিক গল্প।প্রত্যেকটি গল্পই গ্রাম্য ভাষায় লেখা যা গল্পগুলিকে একটি আলাদা মাত্রায় নিয়ে যায়।সত্যি কথা বলতে কি গল্পগুলো ভৌতিকের থেকেও রহস্যজনক বেশি। বলতে পারেন গল্পে কোনো এক আধিভৌতিক রহস্য রয়েছে যা solve করবেন আমাদের এই গল্পের নায়ক। কালিগুনিন চরিত্রটির সাথে আমার প্রথম পরিচিতি ঘটে biva cafe youtube channel এর এক অডিওস্টোরির মাধ্যমে।আর তার পর থেকেই আমি তার ফ্যান হয়ে যাই। এই চরিত্রটিকে যদি আমাকে এক কথায় explain করতে হয়, তাহলে আমি বলব “গ্রামবাংলার Sherlock Holmes with some Supernatural Powers”। লেখকের লেখনির বাঁধনের প্রশংসা না করে থাকতে পারছি না। গল্প একবার পড়তে শুরু করলে আপনি শেষ না করা অবধি ছাড়তে পারবেন না। ছয়টি গল্পই অসাধারণ, তবে আমার সব থেকে ভাল লেগেছে শেষের গল্পটি। প্রত্যেকটি গল্পেই মানুষ যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন,তা কালিগুনিন চরিত্রটি একেবারে দেবদূতের ন্যায় আবির্ভূত হয়ে সমাধান করে দিয়েছেন। বইটি পড়ে দেখতে পারেন যদি horror genre পছন্দ করেন। একটু আলাদা ধাচের তবে নিরাশ হবেন না কথা দিচ্ছি।
সবার শেষে অনেক ধন্যবাদ বর্নপরিচয় টিম কে বইটি available করে দেওয়ার জন্য। আপনারা যে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের এমন উপকার করছেন তা সচরাচর দেখা যায় না। আর আমি তো বাংলা তে type করতেই জানতাম না। অনেক ধন্যবাদ admin কে এত সুন্দরভাবে guide করার জন্য।
যদিও এইটুকু type করতেই আমার দেড় ঘন্টা সময় লাগল, তাও আবার বলে রাখি, আমি এই প্রথম কোনো বইএর review লিখলাম। অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি থেকে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।