ঝুমনি
লেখক: ত্রিজিত কর।
ছোটবেলা থেকে সকল মানুষের কাছের বিছানার তলার অন্ধকার একটি চিরন্তন ভয় এবং আতঙ্কের স্থান। শিশু অবস্থায় অন্ধকার রাতে বিছানা থেকে নিচে নামার আগে বিছানার নিচের অন্ধকারের দিকে ভয়ার্ত চকিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করেনি এমন মানুষ মনে হয় খুব কমই আছেন। সেই চিরন্তন ভয় ‘monster under the bed’ এর অনুভুতি কে আরো ভয়ানক ভাবে জাগিয়ে তলে তরুণ এবং উদীয়মান লেখক ত্রিজিত কর এর ঝুমনি।
গল্পের প্লট আবর্তিত হয় এক কাল্পনিক গ্রাম ধুলোচরা কে ঘিরে, যেখানের কালশ্রুতি মতে দেবাদিদেব মহাদেব এই গ্রামের জামাই এবং এই গ্রাম স্বয়ং মহাদেব এর আশীর্বাদ ধন্য। তেনার আশীর্বাদ এ কয়েকশো বছর পর পর এই গ্রামের মাটিতে জন্ম নেবেন এক রহস্যময় নারী যিনি অতীব অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। এদের নাম শানডুকী। বহুকাল আগে তেমনই এক শানডুকী, ইন্দুবালা এবং তার পাঁচ মেয়ের মধে সবচেয়ে ছোট এবং দসসি মেয়ে ঝুমনির কাহিনীর সাথে লেখক পাঠক এ অতপ্রেত ভাবে জড়িয়ে ফেলেন গল্পের টানে। ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় কিভাবে এক ছোট শিশুর ক্ষীদে তাকে পরিণত করে এক সর্বগ্রাসী পিশাচ এ। লেখক গল্পের ছন্দে ধীরে ধীরে বলে চলেন ছোট্ট ঝুমনির দসসিপনা, গ্রামে মন্নবতর লাগা ও তার পরবর্তি তে দায়ে পড়ে ঝুমনির কাঁঠাল চুরি এবং জমিদার এর অপমান ও ইন্দুবালা এ অপবাদ দেওয়া, বাধ্য হয়ে ইন্দুবালার নিজের হাতে ঝুমনি সহ সকল সন্তানের হত্যা এবং হত্যা পরবর্তি এ অসহায় মায়ের এই নিষ্ঠুর মনুষ্য জাতির প্রতি রাগে করা এক ভয়ানক উপাচার। ক্ষণা দেবীর মর্তে আগমন এবং ঝুমনি নামক সর্বগ্রাসী ক্ষুদা সহ এক ভয়ানক পিশাচ এর সৃষ্টি।
এই গ্রন্থে সাকুল্যে দুটি গল্প, (i) ঝুমনি এবং (ii) আবার ঝুমনি। প্রথম গল্পে, ধুলোচরা গ্রাম এ আগত শহুরে ফ্যামিলি সুমনা, তার স্বামী এবং ছেলে বুকাই। তাদের জীবনে ঝুমনির আগমন। ধুলোচরা এর মাতারানি দাইমার প্রবেশ এবং হৃদয়বিদারক ঘটনার মধ্যে দিয়ে, ঝুমনি ডোহা নামক এক উপাচার এর মধ্যে দিয়ে ঝুমনির তাত্ক্ষনিক নিধন এবং মাতারানি দাইমার আকস্মিক অন্তর্ধান।
দ্বিতীয় গল্পে স্বামীবিচ্ছিন্না অপরাজিতা , তার ছেলে বিনু এবং দুই মার্জার ট্যাঙ্গও ও বেগমজান এর সংসার এ সাত বছর পর ঝুমনি। আতংক ঘনীভূত হয় ঝুমনির হাতে একের পর শিশুর মৃত্যুতে। অতপ্পর, কাহিনী তে গ্রামের স্কুলের টীচার সঞ্জীব এবং বিনুর স্কূলের বন্ধু অর্নার প্রবেশ, যার নাকি মাথার সমস্ত চুল একদম সাদা আর নাকি তার একটা পোষা কথা বলা সাপ ও আছে। এই ভাবে কাহিনীর আবর্তে শেষের দিকে অর্নার আসল পরিচয় প্রকাশ এবং তার ও আরেক মহাশক্তিশালী নারীর সাহায্যে দেবী ক্ষণার স্বর্গে গমনের দ্বারা ঝুমনির নিধন দিয়ে কাহিনীর পরিসমাপ্তি। এই কাহিনী তে, পূর্ববর্তী পর্বের থেকে দুজন লোকের উপস্থিতি রয়েছে, যাদের আসল পরিচয় লেখক কাহিনীর একদম অন্তিম লগ্নে উন্মোচন কারেন এবং মাতারানি দাইমার আকস্মিক অন্তর্ধান রহস্য থেকেও পর্দা অপসরিত হয়।
যারা ভয় এর সাথে রহস্যের গ শিরশিরানি অনুভুতি চান, পড়ে দেখতেই পারেন। সুখপাঠ্য। লেখকের কলমের আর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Mayukh Paul
ঝুমনি
লেখক-ত্রিজিৎ কর
ঝুমনি বইটিতে দুটি গল্প আছে ঝুমনি আর আবার ঝুমনি। দুটি গল্পেই আছে কিভাবে ঝুমনি নামের এই অপদেবতার হাত থেকে মুক্তি পায় গল্পে বর্নিত ছোট্ট শহরটি। গল্প দুটি নিঃসন্দেহে ভয়ের গল্প। যখনই ঝড় ওঠে তার সাথেই আসে ঝুমনি ।সে প্রিয়জনের গলা নকল করে ডাকতে থাকে এই কারণে ঝড় উঠলে বা কারেন্ট চলে গেলে খাট থেকে নামা বারন এই ঘটনা বেশ ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে কিন্তু ভয়ের সাথেই এই গল্পের আর একটা দিক আছে যেখানে আছে মা ও ছেলের সম্পর্কের গল্প।প্রথম গল্পে মুর্শিদাবাদের একটি ছোট্ট মফস্বল শহর অশোকনগরে আসে সুমনা। সঙ্গে একমাত্র ছেলে বুকাই। এখানে এসে একদিন ঝড়ের রাতে সুমনার গোড়ালিতে কিছু আঁচড়ে দেয় । সেই আঁচড় ক্রমশ গভীর ক্ষতে পরিনত হয়।তখন সে জানতে পারে ঝড় উঠলে বা কারেন্ট চলে গেলে খাট থেকে নামা কিংবা খাটের তলায় তাকানো বারন। ইতিমধ্যে সুমনার বান্ধবী রূপার ছেলে বিল্টু ঝুমনির কবলে পড়ে প্রাণ হারায়। এরপর কিভাবে ঐ ছোট্ট শহরটি ঝুমনির থেকে মুক্তি পায় তাই প্রথম গল্পের মূল বিষয়।
আবার ঝুমনি- এই গল্পে আছে অপরাজিতা আর তার ছেলের সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প। অপরাজিতা তার ছেলেকে নিয়ে সেই বাড়িতেই ওঠে যেখানে সুমনা আর বুকাই থাকত। অপরাজিতার বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। স্বামীর অকথ্য অত্যাচারে শেষপর্যন্ত সম্পর্কে ইতি টানতে বাধ্য হয় সে। কাউন্সেলিং করিয়ে, পরিবেশ বদলিয়েও দুঃস্বপ্নের স্মৃতিগুলোকে সে ভুলতে পারে না। তাই ছেলেকে ভালোবাসলেও নিজের মনের সমস্ত রাগ-দুঃখ-হতাশা উগরে দিতো বিনুর ওপর। বাচ্চা ছেলে হলেও বিনুর জীবন সরল-স্বাভাবিক ছিল না। বাবার অভাব অনুভব করা, মা সঙ্গে থাকলেও তাকে কাছে না পাওয়া, সমাজের তৈরী করে দেওয়া "পুরুষালি আচরণের" সাথে তার হাবভাবের অমিল, স্কুলে সহপাঠীদের নিষ্ঠুর ব্যবহার, শিক্ষকদের অসহযোগিতা - সব মিলিয়ে ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়েছিল তার জীবন। তখন তার সঙ্গী হয় সহপাঠিনী অর্ণা একদিন মায়ের তিরষ্কারে অভিমানের বশে নিজের বিপদের আশঙ্কা না করেই বিনু ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে আর ঝুমনির কবলে পড়ে। তারপর কিভাবে সে ঝুমনির হাত থেকে মুক্তি পায় তাই নিয়েই গল্প এগোতে থাকে। গল্পটিকে ৮/১০ দেব।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Indrani
ঝুমনি
লেখকঃ ত্রিজিৎ কর
ভূত ভুতুম ফেসবুক গ্রুপ থেকে প্রকাশিত ভূত ভুতুম উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ (২০২০) এ "মাকুই" নামে উনার প্রথম লেখা পড়েছিলাম। ওই উৎসব সংখ্যার অন্যতম প্রিয় গল্প ছিল এটা। পরবর্তীতে উনার আরো কয়েকটা লেখা পড়ি ফেসবুকে। অবশেষে উনার লেখার ঝুমনি বইটা পড়ে ফেললাম। এর মধ্যে দুটি কাহিনি আছে। প্রথমটি বড় গল্প ঝুমনি এবং দ্বিতীয়টি এর সাত বছর পরের ঘটনা নিয়ে উপন্যাস আবার ঝুমনি। লেখক ত্রিজিৎ করের গল্পগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি কাহিনিতে একদম অজানা কিছু দেবতা, অপদেবতার ও বিভিন্ন তন্ত্র বিষয়ক আচারের সাথে পরিচয় হয়। এই জিনিসটা আবার আমার খুব প্রিয় একটা জনরা। ঝুমনি বইয়েও "ক্ষণদেবী" নামে অজানা এক দেবীর নাম জানতে পারলাম, এটা লেখকের নিজের সৃষ্টি নাকি আসলেই এমন কোনো দেবী আছে কিনা তা জানি না। উনার লেখার হাতও খুব পাকা, ইমোশনাল মোমেন্টগুলো বেশ ভালোভাবে লিখেন। চরিত্রগুলোর জন্য একটা টান কাজ করে। ঝুমনি উপন্যাসটা মোটামুটি ভালোই লেগেছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় একটু বেশিই টানা হয়েছে। অন্তত আরো ২০/২৫ পেইজ কম হলে আরো ভালো লাগতো।
কাহিনি সংক্ষেপ সব জায়গায় আছে তাই আর সেটা লেখলাম না। এখানে শুধু আমার কেমন লেগেছে সেই ব্যক্তিগত অনুভূতি শেয়ার করলাম। ভালো থাকবেন❣️
রেটিং 🌟🌟🌟🌟🌟🌟 (৬.৫)
রিভিউটি লিখেছেনঃ Fardin Rafi
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।