জাগিও না আমায় জাগিও না - হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত Jagiona Amay Jagio Na by Himadrikishore Dasgupta

জাগিও না আমায় জাগিও না - হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত Jagiona Amay Jagio Na by Himadrikishore Dasgupta

উপন্যাসের নাম -- জাগিও না আমায় জাগিও না 
লেখক নাম --- হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত 
কাহিনী শ্রেণী --- ইতিহাসভিত্তিক অতিলৌকিক কাহিনী 

বিশ্বত্রাস তৈমুর লঙ। মধ্যপ্রাচ্যের দুঃস্বপ্ন এই দুঃসাহসিক লুঠেরা অভিযাত্রী একটা সময় দুনিয়ার বিরাট অংশ জুড়ে যে প্রবল সন্ত্রাস তৈরি করেছিল ইতিহাসের পাতায় পাতায় তার বিশদ বিবরণ আছে। কাহিনী শুরু তৈমুরকে নিয়ে। চীন অভিযানের সময় প্রবল শীতের মধ্যে মরুভূমির উপর দিয়ে যাত্রার পর্বে তৈমুরের মৃত্যু হয়। অতঃপর তার মৃতদেহ কোনো গোপন জায়গায় সমাধিস্থ হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর আগে এই ক্রুর নিষ্ঠুর লুঠেরা এক ভবিষ্যৎবাণী করে যায়। বহু শতাব্দী পর তার সমাধি ক্ষেত্র থেকে কেউ না কেউ তার মৃতদেহ তুলে আনবে এবং সেই দিন পৃথিবীতে তার পুনর্জাগরণ বা পুনরাবির্ভাব ঘটবে। এবং ঘটবে আজকের দুঃস্বপ্ন আনা তৈমুরের থেকেও আরো ভয়ঙ্কর কোন চরিত্রের রূপে। সেদিনের ত্রাসের মধ্যে দিয়ে তৈমুরের আত্মাই যেন ফিরে আসবে। 
অতঃপর কয়েক শতাব্দী অতীত। বিশ শতকের রাশিয়ার এক পুরাতত্ত্ববিদ। এই যাবৎ কোথাও তৈমুরের কোন ছবি বা মূর্তির সন্ধান মেলেনি। এই পুরাতত্ত্ববিদের কাজ কোন দেহের কঙ্কাল বা ফসিলের থেকে তার বাস্তব চেহারার বৈজ্ঞানিকভাবে ছবি আঁকা। স্তালিনের রাশিয়ায় তিনি এক বরাত পান। তৈমুর লঙের কোনো ছবি মূর্তি কোথাও নেই বা পাওয়া যায়নি। সুতরাং তৈমুরের সমাধি সন্ধান করে তার কঙ্কাল থেকে তার প্রকৃত চেহারার ছবি আঁকার কাজে তিনি সোৎসাহে লেগে পড়েন। বহু অনুসন্ধানে সেই সমাধির সন্ধান মেলে। কিন্তু বাধা আসে প্রচুর। তৈমুর সম্পর্কিত ভয়ংকর ভীতি আচ্ছন্নতা ও তার সমাধি খুললে আরো ভয়ংকর অভিশপ্ত রূপে তার ফিরে আসার প্রবাদ থেকে প্রতিকূলতা আসতে থাকে। স্থানীয় মানুষদের আপত্তির থেকেও বাধা আসে। কিন্তু সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে অনুসন্ধানী পুরাবিদ তুলে আনেন মৃতদেহের কাঠামোর অবশেষ। তারপরেই ঘটতে থাকে ভয়ংকর বিপর্যয়। গোটা রাশিয়া জুড়ে এবং তৈমুরের অনুসন্ধান বিষয়ক কাজে জড়িত বহু ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসে আকস্মিক দুর্যোগ। কিন্তু সমস্ত সংস্কারকে দূরে রেখে পারিপার্শ্বিকতাকে ভুলে সেই পুরাবিদ তিলে তিলে গড়ে তোলেন তৈমুরের প্রকৃত আদল। যখন তিনি সাফল্য পেলেন ততদিনে কয়েক মাস কেটে গেছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক ভয়ংকর কাল পর্বে জার্মানির সাথে সংঘাতে রাশিয়ার চূড়ান্ত বিপর্যস্ত অবস্থা। এই সময় গোটা বিশ্ব দেখে ফেলেছে বিশ শতকের এক বিশ্বত্রাস নিষ্ঠুর পরাক্রমশালী শাসককে, যার নাম হিটলার। তৈমুরের অভিশাপ বাণী যেন সত্য হয়ে ওঠে। অবশেষে তৈমুরের  বংশধরের সাবধান বাণী অগ্রাহ্য করে নিয়ে আসা এই কঙ্কাল আবার পুরনো সমাধিতে ফিরিয়ে দেন পুরাবিদ। আর বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্বের ঘটনাগুলি এরপরই দ্রুত ঘটতে থাকে। যুদ্ধের চাকা ঘুরে যায়।
ইতিহাসের কালপর্বের সঙ্গে কল্পনাকে মিশিয়ে লেখা কাহিনীটি পড়তে ভালই লাগে। কিন্তু এ কাহিনীর মধ্যে বহু পুরনো প্রবাদ সংস্কার বিশ্বাস ইত্যাদি যেমন মিশে থাকে তেমন ইতিহাসের আরেকটি সত্য ফুটে ওঠে। পৃথিবীর সময় প্রবাহের মধ্যে বারবার দুঃসময় এসেছে, আর এসেছে সেই দুঃসহ সময় আনয়নকারী এক একজন ভয়ংকর চরিত্র। ইতিহাস যাদের নিয়ে গড়া অন্ধকার সময়কে কখনো ভুলতে পারে না। সে দুঃসময়কে বারবার ইতিহাসের ঘটনার স্তূপে চাপা দেওয়া হয়। কিন্তু মানুষেরই লোভ অহংকার ক্ষমতার আগ্রাসী আকাঙ্ক্ষাতে চিরকালের জন্য সমাধিস্থ করা যায় না। তাই দুঃস্বপ্নের চরিত্ররা বারবার ফিরে আসে। আর তার বিরুদ্ধেই অতন্দ্রভাবে লড়াই চলেছে মানুষের শুভশক্তির, মানবতার অন্তর্ভুক্ত বিবেকের। 
রিভিউটি লিখেছেনঃ সোমা মন্ডল

Post a Comment

0 Comments