হরিমতী সদায়পাতি লেখক: পার্থ দে

হরিমতী সদায়পাতি লেখক: পার্থ দে

উপন্যাস: হরিমতী সদায়পাতি
লেখক: পার্থ দে

এই উপন্যাস জীবন সংগ্রামের এক ছায়াছবি। যে সংগ্রামে মানুষ শুন্য থেকে শুরু করে তুঙ্গে উঠে, আবার পড়ে, আবার উঠে এবং আবারো পড়ে। জীবনের এই বারবার ভাঙাগড়ার দলিল এই উপন্যাস।

দেশ তখন সবে স্বাধীন। বাংলায় তখন উদ্বাস্তু কলোনিতে মানুষের ভিড়, খাদ্যের অনটন, রাজনৈতিক অস্থিরতা। মানুষের পাতে ভাত নেই, মাথায় ছাদ নেই। ওদিকে মজুতদারদের কালোবাজারি। নতুন সরকার ব্যবস্থা নিতে হিমশিম।

উদ্বাস্তু কলোনির জয়কালী ভট্টাচার্য সেই অথৈ জলে হাবুডুবু খাচ্ছে এবং স্বপ্ন দেখছে মাথা তুলে দাঁড়াবার। বুকে বল নিয়ে স্ত্রী'র বালা বন্ধক রেখে খাড়া করেন স্বপ্নের মুদিখানার দোকান। মায়ের নামে নাম রাখলেন 'হরিমতী সদায়পাতি'। ছোট ছেলে আর বাপ মিলে ধীরে ধীরে পসার বাড়ালেন। বড় ছেলে জগদীশের সাথে বনে না। সে কংগ্রেসি জামানার বামপন্থী। জয়কালীর জীবনে অশান্তি ঘরে বাইরে উভয়েই। কম দামে জনপ্ৰিয় মুদিখানার পসার চোখ টাটায় অনেকের। ষড়যন্ত্রের শিকার হন ভট্টাচার্য পরিবার। ব্যবসা পড়ন্ত। সেই ব্যবসা ছোট ছেলে অবনীশ আবার তুলে ধরে। কিন্তু লোকের বিষনজরে সে সুখ কতদিনই বা থাকে...?

ছোট্ট একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস পাঠকের সামনে তুলে ধরে তৎকালীন রাজনৈতিক ডামাডোল, মানুষের গ্রাসাচ্ছদনের লড়াই, উদ্বাস্তু মানুষের দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত। গোটা উপন্যাস জুড়ে মানুষের দুঃখ আর্তি ফুটিয়ে তোলা হলেও, লেখক গুরুত্ব দিয়েছেন সেসব জয় করার অদম্য সাহসকে, ভেঙে না পড়ার সংগ্রামকে। চরিত্রদের কথিত ভাষায়, আচরণে, ছড়া কাটায়, প্রবাদে পাঠক সেই যুগটাকে প্রত্যক্ষ করবেন অনায়াসেই।

তবু কিছু যেন অধরা থেকে যায়। অপূর্ণতা থাকে চরিত্রদের পরিণতিতে। বড় ছেলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, উপসংহারে বর্ণিত দুর্দশার পরিণামের হদিশ মেলে না। হয়তো লেখক স্বেচ্ছায় সেসব অপূর্ণ রেখেছে, পাঠকের জন্যই।

Post a Comment

0 Comments