বই - হিমযুগ
লেখক - স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
'Where does the coldness come from if it's not from within our hearts?'
- Anthony T. Hincks এর কথাগুলো দিয়ে উপন্যাসের শুরু। তারপর স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর বেশ কিছু বইয়ের মতোই, এক বেকার ভগ্নহৃদয় প্রেমিক, রুক্মরথ ওরফে রুকু একরকম পালিয়ে আসে কোলকাতা থেকে দূরে, ঠান্ডা পাহাড়ী এলাকায়। প্রখ্যাত লেখক মেঘাদ্রির পি.এ হিসেবে কাজ শুরু করে। তারপর অতীত, পরকীয়া, অন্ধকার, ঘৃণা আর... প্রতিশোধ।
হ্যাঁ গল্পের খন্ডগুলো অনেকটাই চেনা। কিন্তু সেই খন্ডগুলো দিয়ে গড়ে তোলা গতিময়তা, প্রবাহমানতা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল এক অপ্রত্যাশিত চূড়ান্ত পরিণতির দিকে। মা'কে হারানো বিপথগামী কুটু, শান্ত অথচ দৃঢ় রুক্মরথ, একজন সফল লেখক, কিন্তু অসফল স্বামী মেঘাদ্রি, খামখেয়ালি হিমাদ্রি, লাজুক বাসন্তিকা, ভির, উচ্চাকাঙ্ক্ষী জয়ী এবং সুনাভ এর এই গল্প কখন যেন আমাদের অনুভূতি, আমাদের না পাওয়ার গল্প হয়ে ওঠে। যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সম্পর্কগুলোয় জমে ওঠা বরফ সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়, সাবধান করে দেয়- 'হিমযুগ' চলে আসছে। আমার মতে, লেখায় হিউমরের জন্য বিখ্যাত স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর 'মোম-কাগজ' এর পর যদি কোনো উপন্যাস পড়তে পড়তে মনে একটা দুঃখের পর্দা ডানা মেলতে থাকে, তবে সেটা 'হিমযুগ'।
ঘৃণা, দ্বেষ, বিচ্ছেদের নিষ্প্রাণ বরফের মধ্যেও যে সবুজটুকু বেঁচে থাকে, আমাদের বাঁচিয়ে রাখে- সেটাই তো আশা। সেই আশাকে ভালবেসেই তো আমাদের হাজার দুঃখ সহ্য করেও বেঁচে থাকা, বেঁচে থাকতে চাওয়া।আর এই শুরু-শেষের খেলায়, বেঁচে থাকার কারণ খোঁজার আসরে, "পর্দা নেমে যাওয়ার আগে অন্তত একবার হাততালি শুনতে চাওয়া" সব মানুষের প্রতি তাই যেন 'হিমযুগে'র বার্তা,-
"মানুষ যখন মনে করে যে সে জীবনের থেকে সবকিছু শিখে গিয়েছে ঠিক তখনই জীবন তার আস্তিনের তলা থেকে আরো নতুন তাস বের করে আনে। বের করে আনে নতুন ম্যাজিক। আর মানুষ বোঝে সমুদ্রের ধারে নুড়ি কুড়োনো তার শেষ হওয়ার নয়।"
রিভিউটি লিখেছেনঃ Souvik Sadhukhan
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।