দেবীরাক্ষস by সৌরভ চক্রবর্তী

দেবীরাক্ষস by সৌরভ চক্রবর্তী

দেবীরাক্ষস 
লেখকঃ সৌরভ চক্রবর্তী 


সৌরভ চক্রবর্তীর নাম সর্বপ্রথম শুনি দুইবাংলায় তুমুল হাইপ তোলা উপন্যাস "চন্দ্রহাস" এর জন্য। যখন সেটা পড়বো বলে ঠিক করি তখন জানতে পারি এর সিক্যুয়েল আসছে এইবছর। ভাবলাম তাহলে যখন সিক্যুয়েল আপলোড হবে তখন একসাথেই পড়বো। এরমধ্যে কয়েকদিন আগে একইসাথে বের হওয়া লেখকের আরো একটি বই "দেবীরাক্ষস" এর নাম শুনেছিলাম। হঠাৎ কয়েকদিন আগে সেটা পড়ার সুযোগ পেয়ে গেলাম। 

বইটিতে মোট ৭টি বড় গল্প আছে। সবগুলো গল্পই হররের বিভিন্ন সাব জনরার যেমনঃ গথিক, প্যারানরমাল, অকাল্ট, ডার্ক ফ্যান্টাসি ইত্যাদি। ৭টি গল্পই মোটামুটি ভালো ছিল। সবাই এইসব জনরায় যেমন প্লটে গল্প লিখেন, উনার এই ৭টি গল্প নিজ নিজ জনরায় বেশ ভালো কাজ হয়ে থাকবে। তবে আমার প্রিয় গল্প বাছাই করতে বললে আমি বলবো,

শেষ গল্প
মাঝরাতের শেষ জাদু 
দেবীরাক্ষস 

এরমধ্যে শেষ গল্প কাহিনিটা এই বইয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্প। বিশেষ করে এর প্লটটা অনেক ইউনিক ছিল।এমন প্লটের গল্প আমি আজ পর্যন্ত পড়ি নি। এটা আমার প্রিয় হরর গল্পগুলোর লিস্টে উপরের দিকেই থাকবে। এছাড়া দেবীরাক্ষস গল্পটাও ভালো লেগেছে। চন্দহাসের প্রফেসর রাঘব চক্রবর্তীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে এখানে। এই জিনিসটা ভালো লেগেছে। সবমিলিয়ে সবাইকে অবশ্যই বইটা পড়তে সাজেস্ট করবো।

Every dark desire,
Every dark worship or ritual,
Unlocks the door of a new dark world.

আমার মতো যারা হরর, আধিভৌতিক, অতিপ্রাকৃত গল্পের অন্ধভক্ত, তাদের কাছে অবশ্যই এই বইটি সুখপাঠ্য হবে। সাতটি চমতকার ছোটো বড় গল্পের সমাহার। প্রতিটি গল্প রোমাঞ্চিত ও শিহরিত করেছে। কোনটার এন্ডিং, কনটার টুইস্ট আবার কোনটার ঘটনা পরম্পরা দারুন লেগেছে! 

রেটিং 🌟🌟🌟🌟🌟🌟🌟🌟 (৮)

বইটি নিয়ে আরো একটি রিভিউঃ 
দেবী রাক্ষস
সৌরভ চক্রবর্তী
দেবী রাক্ষস বইটি পড়তে বসে আমার মনে হয়েছে ভূতের গল্প থেকে গল্পগুলি একটু আলাদা। কিছু গল্পে আমি পাশ্চাত্যের অকাল্ট প্রথার আভাস পেয়েছি। আবার কয়েকটি গল্পে গ্রাম বাংলার কালো যাদু বা রাক্ষসী দেবীর সাক্ষাৎ পেলাম। চুল গল্পে ডাইনীর উপস্থিতি বা কফিন গল্পে নান উপস্থিতি একটু হলিউড ফিল্ম এর মত মনে হয়েছে। আমার সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে দেবী রাক্ষস, শেষ গল্প, ম্যাজিক তিনটি গল্প। কারণ গল্প তিনটিতে একটু নিজস্বতা মানে হলিউড ভুতের মুভি গুলো থেকে একটু আলাদা মনে হয়েছে। আমার নিজস্ব মত বলতে আমি মনে করি ভূতের গল্প বা তন্ত্র নির্ভর গল্প হলিউডের প্রভাবমুক্ত হলে ভালো হয়। কারণ হলিউডের এসব নিয়ে প্রচুর মুভি বেরিয়ে গেছে।
অবশ্যই বলব বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আমার খুবই ভালো লেগেছে বইটি কয়েকটি হলিউড মার্কা গল্প ছাড়া।
ধন্যবাদ 🙏🙏🙏🙏🙏

বইটি নিয়ে আরো একটি রিভিউঃ 
দেবী রাক্ষস
সৌরভ চক্রবর্তী 
পৃষ্ঠা- ২৭৯
মূল্য- ৩৫০ টাকা
বাতিঘর প্রকাশনী 

দেবী রাক্ষস মূলত ৭টি ভয়ের গল্পের সংকলন। আমি খুব বেশি ভয়ের গল্প পড়ি। তবে সচরাচর যা পড়ি তা থেকে গল্প গুলো ভিন্ন। সব গল্পই দারুণ তা বলবো না তবে কয়েকটি গল্প বেশ ভালো ছিলো। সবগুলো গল্পতেই লেখক যে ভয়ের আবহ তৈরি করার চেষ্টা করেছে সেই ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। লেখার স্টাইল টাও ভালো। একটা ফ্লোতে পড়া গেছে। এই জিনিসটা না হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বই পড়ে কম্ফোর্ট ফিল করি না। 

দেবী রাক্ষস আর মাঝরাতের শেষ যাদু ভালো লেগেছে বেশি। চুল আর ঐজা বোর্ডের শেষ খেলা গল্প দুইটি অন্য গল্পগুলোর থেকে দূর্বল লেগেছে।

তবে বাংলায় ত্রিপুরা আর উত্তরপ্রদেশের পটভূমিতে প্রথম গল্প পড়লাম। এটা নতুন অভিজ্ঞতা আমার জন্য। 

রেটিং- ৪/৫

রিভিউটি লিখেছেনঃ Saiful Islam

দেবীরাক্ষস
(সৌরভ চক্রবর্তী)

বইটিতে আছে মোট সাতটি গল্প। যথাক্রমে আয়ুষ্কাল, চুল, ঐজা বোর্ডের শেষ খেলা, দেবী রাক্ষস, কফিন বন্দী কাঠ, মাঝ রাতের শেষ জাদু, এবং শেষ গল্প। বইটিতে যে সাতটি গল্প রয়েছে তাদের ভাবমূলের যোগসূত্র হচ্ছে কোনো না কোনো মৃত্যু। মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে গল্পগুলি। 

গল্পগুলি পড়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ 'ভয়' পাইনি, তবে অনেকেই রিভিউতে লিখেছেন যে  প্রথম কয়েকটি গল্প রীতিমত ভয়ের অনুভূতি সৃষ্টি করতে সফল হয়েছে। 

দেবী রাক্ষস গল্পটির ভাবনায় নতুনত্ব আছে, কফিন বন্দি কাঠ গল্পের ইংরেজিঘেঁষা স্টাইল হয়তো অনেকের ভালো লাগতে পারে। ভয়ের আবহ সৃষ্টির ব্যাপারে লেখক গতানুগতিক বাংলা ভৌতিক সাহিত্যের চেনা গলি অনুসরণ করেননি। সাতটি গল্পেই সাবলীল বাক্যবিন্যাস বইটিকে সুখপাঠ্য করে তুলেছে। কিন্তু কিছু জায়গায় চরিত্রদের ডায়ালেক্ট ঘটিত সমস্যা  অবশ্য দৃষ্টিকটুই লেগেছে আমার কাছে। 

আমি ভয় পাইনি বলে আপনারা ভয় পাবেন না, এমন বলছি না। পড়েই নাহয় দেখুন, ভয়ের কিছু আছে কি না!

একবার পড়ার জন্য একেবারে মন্দ নয়।

->দেবীরাক্ষস 
->লেখক – সৌরভ চক্রবর্তী
->প্রকাশক – বেঙ্গল ট্রয়কা পাবলিকেশন 
->প্রকাশকাল – ফেব্রুয়ারি , ২০২২ 
->২৯৯/- টাকা

বইমেলার শেষ দিন, শেষ স্টল ভ্রমন। বইটা চোখে পড়া মাত্র মনে হয়েছিল, এটা আমার চাই। চটপট করে বইটা খুলে লেখকের কলমটা চোখে রেখে সেকেন্ডের মধ্যেই স্থির করলাম, ওটা নিজের ঝুলিতে ফেলতেই হবে। পকেট এর শেষ খুচরো গুলোই সম্বল এবার। শেষ দিনের শেষ কালেকশন এটা, তবে পড়ার রাঙ্কিং একটু এগিয়ে এসেছে, তার জন্য দায়ী এই বইএর ভয়ংকর সুন্দর কভার পেজ।

বইয়ের পেছনে একটা সুন্দর কথা লেখা, “ দুর্বল চিত্তের পাঠক, নিজ দায়িত্তে পড়বেন “
নেহাত খুব একটা ভুল লেখা নেই, তবে সেটা প্রথম চারটি গল্পের ক্ষেত্রে। বাকি তিনটি গল্প, হুম চলে যাবে।

এর আগে লেখকের বেশ কয়েকটি বই জনপ্রিয় হয়েছে। তবে আমার কাছে এই বই টি প্রথম। আসলে একটু চেখে দেখতে চাইছিলাম, গা কাঁটা দেওয়ার অন্য স্বাদটি। হুম, কাহিনী গুলোতে কিছু একটা আছে।  

ভয় শব্দটাকে নিয়ে ঘাটতে ঘাটতে, অনেক গল্পের বই তো পড়লাম। মোটামুটি অনেক ক্ষেত্রেই ভয়টা বস্তু, ব্যাক্তি অথবা স্থান কেন্দ্রিক। এই বইয়ের ক্ষেত্রেও প্রসঙ্গটা সেই চাদরেই ঢেকে রয়েছে। কিন্তু প্রতিবার চাদরের রং পালটেছে, কখনও বা লাল রঙের মৃত্যু, অথবা নীল আকাশে তন্ত্রের ছাই। 

গল্প লেখার ধরন যথেষ্ট নতুনত্ব বহন করে। আমি পড়তে শুরু করলাম। কোন গল্পের প্রথম পাতা অথবা কোন গল্পের চার লাইন পড়া হয়েছে। অনুভব করলাম, এমন একটা দমবন্ধ করা আবহাওয়া ও কৌতূহল যে না শেষ করে ওঠার উপায় নেই বইকি। যেমন সাবলীল ভাষা, তেমনই ভয়ঙ্কর মুহূর্তের জীবন্ত ও সুন্দর কল্পনাতীত বিবরন। 
প্রেক্ষাপট যেটাই হোক না কেন, বর্তমানের ঘটনা থেকে শুরু আর যখন তখন অতীতের কালো ছায়া, চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলে লেখক তার হাতের জাদুর সাথে পরিচয় করাতে সক্ষম। ঘটনার অতীত বর্তমান মিলে মিশে ভয়ানক কিছু স্পর্শ উসকে দিয়ে চলে যায়। 
 
“দেবীরাক্ষস” গল্পটি এই বইয়ের সবথেকে বড় গল্প, যেটা আমার দারুন লেগেছে। দেবী অথচ রাক্ষস, চিন্তা শক্তি প্রখর।
কিন্তু এই বইয়ের সব থেকে পছন্দের গল্প হোল “চুল“। “কফিন বন্দি কাঠ “ গল্পটি খুব একটা ভাললাগেনি। আসলে রিয়েলিটি থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে লেখা গল্পটির বুনন তেমন জোরালো নয়। ইংরেজি সাহিত্যের ঘরানায় সামঞ্জস্যে মাঝে মধ্যে চিড় ধরেছে।

মোটের ওপর এই সাতকাহনটি একটি কালেকশন এ রাখা যেতে পারে। বর্তমান সময়ের কথা মনে করলে, এখন পাঠক এর স্বাদ যেমন পরিবর্তিত হয়েছে, তেমনই তাদের জন্য এসেছে আজকের সময়ের কিছু লেখক লেখিকারা। সময়ের সাথে মানিয়ে তারা ভয় কে আর পোড়ো মন্দিরে বা অভিশপ্ত হোটেল এ আটকে রাখেনি।
লেখক সৌরভ চক্রবর্তী খুব সতর্কতার সাথেই সেই ব্যাপারগুলো মাথায় রেখেছেন। এই ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ লেগেছে।
কোন গল্পের থিম আমি রিভিল করছি না। পাঠক বা পাঠিকা বইয়ের গন্ধ থেকে শুরু করে ভয় কে সামনে থেকে চাখুক ১০০ ভাগ, এটাই আমার উদ্দেশ্য।

প্রুফ রিডিং ( ১২৭, ১৩১ পাতা) এর ক্ষেত্রে আরও একটু নিখুঁত ভাবে দেখবে আশা করি পরবর্তী প্রিন্ট এর সময়।

(একটি গল্পের মধ্যে কিন্তু চন্দ্রহাস এর উল্লেখ রয়েছে, যদিও সেটা বলা বারন। চন্দ্রহাস এর দ্বিতীয় পার্ট বেড়িয়ে গিয়েছে দেখলাম। অথচ প্রথম পার্টটাই পড়লাম না। পকেটটা একটু জমুক, তারপর ভেবে দেখবো।) 

রিভিউটি লিখেছেনঃ সমীরণসামন্ত

Post a Comment

0 Comments