ডেয়ার অর ডাই by শায়ন্তনী পুততুন্ড Dare or Die : Sayantani Putatunda
থ্রিলার গল্প কিংবা উপন্যাসের জন্য শায়ন্তনী পুততুন্ড এক অদ্বিতীয় নাম। শায়ন্তনী পুততুন্ডের ডেয়ার অর ডাই উপন্যাসটি সম্পর্কে পাঠকের মূল্যায়ণ থাকছে আজকের পর্বে।
উপন্যাসটি মূলত সাতটি চরিত্র নিয়ে গঠিত এদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছুর ভয় রয়েছে ভয় বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে ফোবিয়া, গল্পের সূত্রপাত একদম সাত জনের কলেজ লাইফ থেকে যেখানে ৭ জনের একটি গ্রুপ ছিল ,নাম - ফোবিয়ান্স এবং তারা উদ্ধত রেগিং করতো সমকালীন জুনিয়রদের ওপর । এরপর যখন তারা প্রত্যেকেই নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন হঠাৎই একে একে এই ফোবিয়েন্সের সদস্যদের মৃত্যুর খবর আসতে থাকে এবং এই প্রত্যেকটি মৃত্যুই হয় যারা যে বিষয়ে ভয় পেত সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যখন তাদের এই মৃত্যুর খবর আসতে থাকে তখন তাদের কারোর সঙ্গে কারোর কোন যোগাযোগ ছিল না। কেন এই মৃত্যু কেনই বা ফোবিয়ান্স সদস্যদের একে একে মারা হলো কেই বা মারল? কি তার পেছনের উদ্দেশ্য? এই সমস্ত কিছুকে কেন্দ্র করে লেখিকা উপন্যাস রচনা করেছেন মূলত অধিরাজ সিরিজের আরেকটি যোগ বলা যেতে পারে, থ্রিলার গোত্রের লেখা ,লেখিকার সঙ্গে সঙ্গে খুনিকে ধরতে গিয়ে কখন যে বইটি শেষ হয়ে যায় বোঝাই যায় না তবে হ্যাঁ, প্রথমদিকে মন বসাতে একটু সময় লেগেছে, কিন্তু যখন গতি পেল তখন আর সময় লাগেনি একবার পড়ে দেখা যেতে পারে থ্রিলার হিসেবে বেশ ভালো।
🍁বই - ডেয়ার অর ডাই
🍁লেখিকা - সায়ন্তনী পূততুন্ডা
🍁এই কাহিনী আগের বইটি "চুপি চুপি আসছে " তাঁর পর থেকেই শুরু হয়েছে। আগের গল্পটা না জানা থাকলে, প্রথম দিকে পাঠকের একটু বুঝতে অসুবিধা হবে। আগের কেসের মেন্টাল শক এখন ও কাটিয়ে ওঠেনি ঠিক মতো অধীরাজ, এর মাঝেই আবার একটা নতুন কেস আসে অধীরাজের কাছে। কেস নয় ঠিক, কোনো ভাবে তাঁদের কাছে খোঁজ আসে কালিয়া নামের একজন সুপারি কিলার নাকি কয়েকজন কে মারার জন্য সুপারি পেয়েছে। তাকে ধরতে গিয়েই দেখতে পেলো যাদের মারার জন্য সুপারি দেওয়া হয়েছে, তারা আপনা থেকেই অন্য কারণে মারা যাচ্ছে। প্রত্যেকের মৃত্যুর কারন ভয়, প্রচন্ড ভয় পেয়ে কার্ডিয়াক ফেলিওর।
আস্তে আস্তে যারা মারা গেছে তাঁদের অতিত ঘাটতে গিয়ে বেরিয়ে আসে কিছু ভয়াবহ ব্যাপার। উঠে এসেছে কলেজ লাইফের ৱ্যাগিং করার মতো নোংরা কাজ।পুরো C I D টিম এই ঘটনার তদন্ত শুরু করলে সামনে আসতে থাকে একের পর এক চমক। কখনো আবার উঠে আসে হন্টেড রুমের মতো কাহিনী।
🍁এর মাঝে অধিরাজ সহ গোটা টীম কে কিভাবে বিপর্যস্ত হতে হয়, অধীরাজ কি পারবে এই রহস্যর সমাধান করতে, যদি পারে কিভাবে করবে? তা জানতে হলে পাঠকে অবশ্যই এই টান টান থ্রিলার টি পড়তে হবে।
🛡️গল্পের চরিত্র বুনয়ন খুবই সুন্দর। প্রত্যেকটা চরিত্র নিজের নিজের জায়গাতে অসাধারণ। যার মুখে যেমন সংলাপ প্রয়োজন তেমন টাই আছে, তবে কয়েকটা জায়গাতে ড. চ্যাটার্জী কে মনে হয়েছে একটু বেশি বেশি হাস্যকর করে ফেলেছেন।
🛡️সাইকোপ্যাথ কিলার মানে যে ব্যাপার টা থাকে, পুলিশের সাথে অপরাধী যেমন বুদ্ধির লড়াই খেলতে থাকে, পুরো উপন্যাস জুড়ে সেটা অনুভব করেছি। ২ জনের দিক থেকেই তাঁদের কে ভাবতে বাধ্য করেছে।
🛡️বইটাতে ফরেন্সিক সাইন্স এর অনেক বিষয় নিয়ে বলা আছে, যেগুলো আগে কখনো শুনিওনি।
🛡️বইটার পিছনে লেখা আছে অ্যাডাল্ট সিরিজ, যদিও এই বইটি পড়ার সময় আমার মনে হয়নি এটা অ্যাডাল্ট দের জন্য। আমার মনে হয় এটা সব বয়সী পাঠকদের জন্যই ঠিক আছে।
🛡️আগের বইগুলির মতো এটিতেও কোনো অলংকরণ নেই। সেটা থাকলে মনে হয় বইটি আরও চমকপ্রদ হতো।
🚫আগের বইগুলোতে যেমন সমাজের ভিতরে ঘটে চলা সমস্যাকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছিল, এই কাহিনীও সেই রকম একটা ঘটনা নিয়ে লেখা, যার কারণে বহু প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে।🥲স্বীকার করতে বাধা নেই এই ঘটনা আমার সাথেও ঘটেছিলো একসময়, তাই এর ভয়াবহতা কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারি।
🍂সব শেষে এটাই বলার, একজন লোক অনেক দিন ধরে একই ওষুধ খেয়ে চলেছে, একটা সময় আসবে যখন ওই ওষুধ আর লোকটার উপরে কোনো প্রভাব ফেলবে না, সেটারই একটা বাস্তব উদাহরণ লেখিকা এখানে দিয়েছেন, ভয় পেতে পেতে যখন মানুষ ভয় পেতেই ভুলে যায়, সেই লোকটাই তখন কিরকম ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
সব মিলিয়ে আবারো একটা বেশ ভালো রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনী পড়লাম। পরের বইয়ের জন্য আগ্রহি।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Dr Jeet Majumder
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।