চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর্ধান অন্বেষণ - কাঁহা গেলে তোমা পাই ১ ও ক্ষমা করো, হে প্রভু

চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর্ধান অন্বেষণ - কাঁহা গেলে তোমা পাই ১ ও ক্ষমা করো, হে প্রভু

চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর্ধান অন্বেষণ : ফিকশন 

বই ১ - কাঁহা গেলে তোমা পাই ১ 
লেখক - ডা : জয়দেব মুখোপাধ্যায়। 
বই ২ - ক্ষমা করো, হে প্রভু 
লেখক - রূপক সাহা। 


বাঙালি তাদের অত্যন্ত প্রিয় দুই বাঙালির অন্তর্ধান নিয়ে বরাবর চর্চা এবং তর্কে সততঃ উৎসাহী। একজন অবশ্যই নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু। অপরজন তাঁর প্রায় শ'পাঁচেক বছর আগে প্রায় একইরকম রহস্যময়তার মোড়কে অন্তর্হীত শ্রীচৈতন্যদেব। বহু বই, প্রবন্ধ, ট্যাবলয়েড এবং বহুল-চর্চিত এহেন জঁর সাহিত্যে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় বোধকরি প্রথম বইটি - যেটি আদতে খুব মূল্যবান গবেষণাপত্র হতে পারতো, কিন্তু খোদায়ে মালুম কি কারণে ডাঃ মুখোপাধ্যায় পুরো লেখাটিকে একটি ফিকশন রূপে পরিবেশন করেছেন। কখনো যদি এই একই বিষয়ে নন-ফিকশন রিভিউ লিখতে যাই, তখন বলবো যুধিষ্ঠির জানা ওরফে মালীবুড়ো কিভাবে ঠিক এই প্রশ্নটাই বারবার তুলে এনেছেন তাঁর বইটিতে। হয়তো জনপ্রিয় হয়েছেই এই কারণে যে সাধারণ মানুষ বইটিকে প্রামান্য না ভেবে একটি থ্রীলার ধরে নিয়েই পড়েছে... লেখাটির গতিময়তা নিয়ে চট করে সিদ্ধান্ত আসা আমার পক্ষে অসুবিধা কারণ,  আমি পড়তে শুরুই করেছিলাম লেখাটির ব্যাকড্রপটা জেনে নিয়ে। একটি বিখ্যাত বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রের কলামে এ নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছিলো। সেটা না জেনে শুধুই থ্রীলার বা চৈতন্যদেবের সাথে সত্যি কি হয়েছিল জানার আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলে হয়তো মাঝেমধ্যে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটতে পারে - কারণ অসম্ভব ইনফো-ডাম্পিং (গবেষণা পত্র হলে যাকে সাইটেশন বলে অনায়াসে মেনে নেওয়া যেতো)। এতগুলো নেগেটিভ বিষয় থাকলেও বইটা কিন্তু পাঠককে ভাবাবে। আরও দুটো রেফারেন্স বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করবে। সবচাইতে বড় কথা একটা বিরাট সাসপেন্স তৈরি করে আচমকা ফুরিয়ে যাবে! এই বইয়ের দ্বিতীয় ভাগ হয়তো আর কখনোই প্রকাশিত হবেনা। পাঠক তাই এই বইটা শেষ করার পর একটা ক্লোজার চাইবে। তখন আর ফ্যাক্টের কচকচি পোষাবে না। সেই মোক্ষম  মুহুর্তে হাতে তুলে নেওয়া যেতে পারে উল্লিখিত দ্বিতীয় বইটি! রূপক সাহার স্পোর্টস জার্নালিজম্ পড়তে অভ্যস্ত আমি বইটা পড়তে পড়তে কিন্তু বেশ আরাম পেয়েছি। হ্যাঁ ক্লোজার হয়তে দিতে পারবেনা এই বইটা, কিন্তু একটা ফ্যান্টাসিকে বাস্তবায়নের জমি তৈরি করে দিতে বহুলাংশে সক্ষম হবে বৈকি! উপন্যাসের শুরুতেই পাঠক মোটামুটি আন্দাজ করে নিতে পারবেন গল্পের চরিত্রগুলি কে বা কাদের ওপর আধারিত। প্রধান চরিত্রটিকে নিয়ে তারপর ইতিহাস আশ্রিত ফ্ল্যাশব্যাক/ট্রান্স আর বর্তমানের ঘটনাশ্রোতের মধ্যে তরতর করে এগিয়ে যাবে কাহিনী। চৈতন্য জীবনী সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা থাকলে আরও সুবিধা হবে ঘটনাপ্রবাহগুলিকে বুঝতে। তবে শেষের দিকটা বা এক্ষেত্রে ক্লাইম্যাক্সটা হয়তো আরও ভালো হতে পারতো। তবে পাঠকের চাহিদারও শেষ নেই! সবমিলিয়ে বইটা সবার বেশ ভালোই লাগবে আশা করি। এতো অবধি কেউ এই দীর্ঘ  রিভিউ টি পড়ে থাকলে তাঁকে ধন্যবাদ।

Post a Comment

0 Comments