ব্ল্যাক ক্রস by গ্রেগ আইলস, ইমতিয়াজ আজাদ Black Cross by Greg Iles, Imtiaz Azad

ব্ল্যাক ক্রস by গ্রেগ আইলস, ইমতিয়াজ আজাদ Black Cross by Greg Iles, Imtiaz Azad

নামঃ ব্ল্যাক ক্রস 
ধরণঃ অ্যাকশন, স্পাই থ্রিলার 
লেখকঃ গ্রেগ আইলস 
রূপান্তরঃ ইমতিয়াজ আজাদ 
প্রকাশকঃ চিরকুট প্রকাশনী 


কাহিনী সংক্ষেপঃ
সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। জার্মানের অবস্থা প্রায় শোচনীয় পর্যায়ের। তামাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর সংকট দেখা দিয়েছে যা যুদ্ধাস্ত্রের জন্য অতি প্রয়োজনীয়।  হার মেনে নেয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে হিটলারের সেনাবাহিনী।

কিন্তু এখনও শেষ একটা তুরুপের তাস চালা বাকি আছে হিটলারের যা সম্পূর্ণ যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। আর এই তুরুপের তাসের তত্ত্বাবধানে আছে হিটলারের ডান হাত হিমলার।

হিমলারের আয়ত্তাধীনে গবেষণারত বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে সারিন, সোমান নামের ভয়ঙ্কর সব রাসায়নিক গ্যাস যা মুহূর্তের মধ্যে মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। টটেনহাউসেন নামের বন্দীদের এক ক্যাম্পে ইহুদী, খ্রিস্টানদের উপর চলছে এসব গ্যাসের কার্যকারিতার পরীক্ষা। ফলাফল ভয়াবহ। গ্যাসের সংস্পর্শে আসা সকল বন্দী মৃত্যুবরণ করছে। 

এদিকে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের কাছে খবর এসেছে অতি শীঘ্রই জার্মানিরা এই উদ্ভাবিত গ্যাস যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োগ করবে। এই পরিকল্পনা বানচাল করার জন্য ব্রিগেডিয়ার ডাফ স্মিথের সাহায্যে টটেনহাউসেনে কমান্ডো পাঠিয়ে গুপ্ত আক্রমণের মাধ্যমে বন্দীসহ সকলকে মেরে ফেলে জার্মানিদেরকে বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছেন যে তাদের কাছেও মরণঘাতী গ্যাস আছে। এতে যেন হিমলার বা হিটলার যুদ্ধক্ষেত্রে গ্যাস প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার চিন্তা করে।

টটেনহাউসেন বন্দীশালা ধ্বংস করার জন্য রওনা দিল জোনাস স্টার্ন আর মার্ক ম্যাককনেল নামের বিপরীত মানসিকতার দুই কমান্ডো। একজনের মনোভাব বন্দীশালার সবাইকে মেরে ফেলা, আরেকজনের মনোভাব বন্দীদেরকে বাঁচানো। এদিকে তাদের সাহায্যের জন্য রাতের আধারে প্যারাস্যুটে করে নেমে পড়লো ক্যাম্পের কাছে আরেক দল কমান্ডো বাহিনী। 

কমান্ডো বাহিনীর অবতরণের ঘন্টাকয়েকের মধ্যেই  টটেনহাউসেনের রক্ষীবাহিনী আবিস্কার করে ফেলল কমান্ডো বাহিনীদের লুকিয়ে রাখা প্যারাস্যুট। চারিদিকে খুঁজতে শুরু করলো তারা। সেইসাথে একজন দুইজন করে হারিয়ে যাচ্ছে রক্ষীবাহিনীর লোকজন। এদিকে হিমলারের কাছে গ্যাসের ফলাফল প্রদশর্নের দিনও এগিয়ে আসছে দ্রুত। কমান্ডো বাহিনীকে খুঁজে না পাওয়ায় বন্দীদের উপর নির্যাতনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিল তারা।

এদিকে জোনাস স্টার্ন পড়েছে উভয় সংকটে। সে আর ম্যাককনেল কি পারবে তাদের মিশন সফল করে নিরাপদে দেশে ফিরে যেতে? নাকি ভিন্নভাবে তাদের মিশন সফল করবে? তাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক যোগাযোগ বা প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ডাফ স্মিথ রওনা করিয়ে দিয়েছেন বোম্বার বিমান, ওই বন্দীশালাকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য। জোনাস স্টার্ন আর ম্যাককনেল কি পারবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের মিশন সফল করতে? বন্দীশালার বন্দীদের ভাগ্যেই বা কি আছে?

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
অনেক দিন পর দারুণ একটা স্পাই মিশন পড়লাম। পড়ার সময় মনে হচ্ছিল যেন আমি যুদ্ধক্ষেত্রে অদৃশ্যভাবে উপস্থিত হয়েছি, স্টার্ন আর ম্যাককনেলের সঙ্গী হয়েছি।

বইটি মূলত স্মৃতিচারণামূলক যেখানে কমান্ডো ম্যাককনেলের নাতিকে এক পাদ্রী কাহিনী শোনাচ্ছেন,  শোনাচ্ছেন জোনাস স্টার্ন আর মার্ক ম্যাককনেলের সেই যুদ্ধসময়কালীন রুদ্ধশ্বাস মিশনের দিনগুলি।

বইটিতে উঠে এসেছে বন্দীদের উপর অকথ্য নির্যাতনের বর্ণনা। পড়তে পড়তে অবাক হয়ে যাবেন যে জার্মানিরা কতটা খারাপ ছিল, কতটা পাশবিক হয়ে গিয়েছিল তারা।
সেইসাথে পাবেন স্টার্ন আর ম্যাককনেল নামের দুইজন বিপরীত মানসিকতার মানুষ কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়ে একজোট হতে বাধ্য হলো।

বইটিতে যুদ্ধকালীন কিছু রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের ব্যাপারেও জানতে পারবেন। সেইসাথে কমান্ডো ট্রেনিং, স্পাইং, রোমান্স, ট্র্যাজেডির ছোঁয়া। মোটকথা দারুণ একটা অ্যাকশন প্যাকেজ। আর গল্পের সমাপ্তিটাও আপনাকে দারুণ তৃপ্তি দেবে।

অনুবাদকের ব্যাপারে কিছু বলার নেই। এমনই ঝরঝরে অনুবাদ করেছেন যে পড়ার সময় মনেই হয়নি কোন অনুবাদ পড়ছি। এজন্য অনুবাদককে আন্তরিক ধন্যবাদ।

Post a Comment

0 Comments