বই : বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রান
লেখক : শরীফুল হাসান
প্রকাশনী : অন্যধারা
জনরা : সামাজিক থৃলার
একজন অনাথ শিশুর বড় হওয়া, পরিচয়হীন জীবনের মোড়ে মোড়ে নতুন নতুন পরিচয় পাওয়া, আর সমাজের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া নিয়েই এই গল্প।
১৯৭১ এ পরিবারের সব সদস্যকে হারায় ছোট্ট এক ছেলে। এক রেভারেন্ডের আশ্রয়ে বড় হতে থাকে। কিন্তু ভাগ্য তাকে বারবার আবাস বদলাতে বাধ্য করে, বাধ্য করে পরিচয় বদলাতে।
ছেলেটা সব পরিবেশেই মানিয়ে যায়, মানিয়ে নেয়৷
ছেলেটার নাম পিন্টু। তার শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, প্রেম, ভালোবাসা, কষ্ট, রাগ সব কিছু লেখক চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলেছেন।
পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো সেই পিন্টুর বেড়ে ওঠা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
গল্পটা তিনটা সময় কেন্দ্রিক। ১৯৭৫ সাল থেকে পরের কয়েক বছর, ১৯৯১ থেকে সামনের কয়েক বছর এবং ১৯৯৫ থেকে কয়েক বছর। প্রতিটি অধ্যায়ের আলাদা আলাদা নাম এবং সাল উল্লেখ করা ছিল। এভাবে তিন সময়ের কথা লেখা হলেও পড়তে মোটেই অসুবিধা হয়নি। বরং বারবার চলে যাচ্ছিলাম সেই সময়গুলোর কাছেই।
পিন্টুর গল্পের পাশাপাশি তখনকার সামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা, পরিবারের ভূমিকা, হিন্দু মুসলিম বৈষম্য ইত্যাদি সবকিছুই উঠে এসেছে।
গল্পটা শুধুই পিন্টুর নয়, তাকে কেন্দ্র করে আরও অনেক চরিত্র আছে। যাদের গল্পও আছে এখানে। সব চরিত্রের ভিড়ে পূরবী ছিল অন্যতম। একটা মেয়ে কতখানি অসহায় হতে পারে তা বোঝা গেছে এই চরিত্রের মাধ্যমে। একইসাথে একটা মেয়ে কতটা কঠোর আর দৃঢ় প্রত্যয়ি হতে পারে সেটাও এই চরিত্রেই ফুটে উঠেছে।
গল্পটা এক কথায় অসাধারণ। একদম শান্তভাবে বয়ে চলা গল্প, মাথার মধ্যে প্রতিটা দৃশ্য আপনা আপনি তৈরি হচ্ছিলো। গল্প থেকে মনোযোগ সড়ানোর কোনো অবস্থাই ছিল না।
বহুদিন পর কোনো বই পড়ে বারবার কেঁদেছি।
বই এর প্রচ্ছদটা এত সুন্দর, আর নামটা এত্ত বেশি সুন্দর যে বইটা হাতে নিলেই মনে হচ্ছিলো বৃষ্টির ঘ্রান পাচ্ছি।
অল্প কিছু টাইপিং মিসটেক ছিল শুধু, এছাড়া বই এর প্রোডাকশন বেশ ভাল। বইটি অবশ্যই পড়ার চেষ্টা করবেন।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।