অন্ধকালীর দেউল
লেখিকা : অদিতি সরকার
ইদানিং অলৌকিক জঁর থেকে জোর করে দূরে দূরে থাকতে চাই কিন্তু সে 'আয় এদিকে আয়, হ্যাঁ এদিকটায় আয় আমিতো এখানেই' এরম একটা ভাব করে ঠিক আমাকে তার দিকে টেনে নিয়ে যায়! কি আর বলবো দুঃখের কথা, কদিন আগে পটমঞ্জরী শুরু করলাম ঐতিহাসিক উপন্যাস ভেবে ওবাবা সেই চলে গেল অতিলৌকিক আখ্যানে আর কাল ইয়ামোটা বইচই শারদ সংখ্যাটা খুলে প্রথমেই যেটা বেরোলো 'অন্ধকালীর দেউল', অদিতি সএকার এর লেখা। লেখিকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে লেখা 'হাজার টাকার বউ' এর আবেশ তো আমার এখনো কাটেনি, তাই শুরুই করে ফেললাম অন্ধকালীর দেউল, এবং হ্যাঁ, এটাও অলৌকিক গোত্রেরই উপন্যাস।
গল্পটি শুরু হয় গৌরব ও পিয়ালী, এক অল্পবয়সী যুগল যারা লকডাউনের ঘরবন্দী অবস্থায় নাকাল হয়ে যেকোনো ভাবে একটু মুক্তির স্বাদ পেতে চায় এবং নির্জনতায় নির্ভেজাল অবকাশ বিনোদনই প্রথম শর্ত! গৌরব তার অফিসকলিগ এর থেকে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এক গ্রামের এক রিসর্ট এর খোঁজ পায় আদতে যা একটি রাজবাড়িকে প্রয়োজনীয় মেরামতি ও রূপান্তর ঘটিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে। সেই গ্রামে আসা ইস্তক পিয়ালীর প্রতি স্থানীয় মানুষদের কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক আচরণ, পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ, স্থানীয় অন্ধকালীর দেউল নিয়ে রিসর্টের কর্মীদের ঢাকঢাক গুড়গুড় সবটা মিলিয়ে গল্প বেশ রোমাঞ্চকর ভাবে দুর্বার গতিতে এগোতে থাকে। হ্যাঁ, এই গতিময়তাও গল্পকারের একটা বৈশিষ্ট্য বটে। কখনোই পড়তে পড়তে বিরক্তি আসেনা বরং এমন ভাবে ঘটনাক্রম বর্ণনা করা হয় পরের ঘটনা জানার জন্য পাঠক মুখিয়ে থাকতে বাধ্য হয়। তো গল্পের ক্রমপরিণতির দিকে এগোতে এগোতে জানা যায় গ্রামের এক অতীত ঘটনার কথা- অতীত পাপের কথা তার সাথে কিভাবে জড়িয়ে যায় গৌরব পিয়ালী, রিসর্ট এর অপর দুই বোর্ডার এর ভূমিকা কেমন ছিল তারা কোনোভাবে গল্পের পরিণতির জন্য দায়ী কিনা -- সমস্তটা শেষ অব্দি জানা যায় উপন্যাস শেষ করেই। তাই এই আবছা আবছা ধোয়ার মেঘ এর আড়ালের রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে এবং শেষ পরিণতির সেই আবছায়া মেঘের আড়ালেই থেকে গেল না ঝলমলে রোদ্দুর সেই মেঘের বলয় কাটিয়ে দিল সে কথা জানতে চাইলে অবশ্যই অন্ধকালীর দেউল পড়তেই হবে।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Palashpriya
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।