উপন্যাস - হরিমতী সদায়পাতি (শারদীয়া অন্তরীপ)
লেখক - পার্থ দে
স্বাধীনতাকালীন সময়ের পশ্চিমবঙ্গের এক পরিবারের গল্প বলে এই উপন্যাসটি। দেশভাগ ও পরবর্তী উদ্বাস্তু সমস্যার প্রেক্ষাপটে পূর্ব-পাকিস্তানের এক সচ্ছল পরিবারের কর্তা কপর্দকশূন্য উদ্বাস্তুকলোনীর গরিব পুরোহিত হয়ে ওঠা জয়কালী ভট্টাচার্য তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে, পৌরোহিত্যের পাশাপাশি স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করতে গিয়ে একটি মুদির দোকান প্রতিষ্ঠা করেন, সেই দোকান প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট, তিলতিল করে গড়ে তোলা এবং দোকানকে রক্ষা করতে নিজের আপনজনদের দূরে সরিয়ে দিতেও যে তিনি পিছপা হননি বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে আমরা সেটা দেখতে পাই। বস্তুত, এই মুদির দোকানটি ই উপন্যাসটির মুখ্য চরিত্র। তাকে কেন্দ্র করেই ঘটনাপ্রবাহ আবর্তিত হতে থাকে।
তবে এই উপন্যাটি একটি পরিবারকেন্দ্রিক হলেও, প্রেক্ষাপট হিসেবে সমকালীন অস্থির রাজনৈতিক অবস্থা, খাদ্যসংকটের অস্থির দিনগুলো, খাদ্যআন্দোলনের তীব্র আন্দোলন সমস্তটা গল্পছলে খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষত যাঁরা রাজনৈতিক আলোচনা পছন্দ করেননা,সচেতন ভাবে 'রাজনৈতিক কচকচানি' থেকে শতহস্ত দূরে থাকেন, তাঁদের ও ঘটনাক্রমে এই সমস্ত রাজনৈতিক ইতিহাস পড়তে খুব খারাপ লাগবেনা বলেই আমার বিশ্বাস। বিশেষত এখনকার সময়ে রাজনৈতিক আলোচনার পরিসর যে ব্যক্তি-আক্রমন আর নাচ গান খেলা মেলায় আটকে গেছে তাদের পূর্বসূরীরাই কতটা পরিণত রাজনৈতিক আন্দোলন ইত্যাদিতে পদক্ষেপ করতেন সেটা লেখক মহাশয়ের হাতযশ আর সুন্দর উপস্থাপন ভঙ্গিতে পাঠককুল আরেকবার পড়তে পারেন, জানতে পারেন ভাবনার অবকাশ তৈরি হয়। উপন্যাসটির আলোচনায় রাজনৈতিক বিষয়ে বেশি লিখলাম কিন্তু উপন্যটির আধারটাই তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা অবশ্য তার সাথে কলোনীর কূটকচালি, চিরন্তন কাঁকড়া প্রবৃত্তি এবং বংশগরীমায় অন্ধ বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ --- সবটা মিলে তৈরি হয়েছে হরিমতী সদায়পাতি।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।