বইয়ের নাম- ওয়ারেন দাদুর ধাঁধা-বাক্স
লেখক- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
প্রকাশনী- আনন্দ
রেটিং-৭/১০
স্মরণজিৎ বাবুর লেখা নিয়ে বিস্তর আলোচনা পড়ে চলেছি। কোনো মানুষ ডাইহার্ড ফ্যান তো কোনো মানুষ ওনাকে সহ্য করতে পারেন না! চুপিচুপি বলে রাখি আমার কিন্তু বেশ লাগে ওনার লেখা (সমালোচকরা বকা দেবেন না কিন্তু! কেঁদে দেবো!)
আপাতত এই বইটি নিয়ে একটু আলোচনা করি কেমন! আচ্ছা আগেই বলে রাখছি কোনো পূজাবার্ষিকীতে আগে এই বইটির কোনো গল্প বেরিয়েছে কি না সঠিক বলতে পারবো না। পড়লেও ভুলে গেছি! হি হি হি!!!
যাইহোক শুরু করি এবার, এই বইটি (নামটা বড্ড লম্বা!) মূলত কিশোর অ্যাডভেঞ্চার। তবে আমার মতন ত্রিশোর্ধ মানুষ যারা এখনও কিশোর সাহিত্য পছন্দ করেন তারা যদি না পড়ে থাকেন একবার কিন্তু পড়ে দেখতে পারেন। ভালো লাগবে। এই বইটিতে মোট তিনটি গল্প আছে।
১.ওয়ারেন দাদুর ধাঁধা-বাক্স
২. শান্টুর টিম
৩. স্যার রজার ডৌলারের মোতি
এবার এই তিনটি গল্প নিয়ে একটু বলি-
১.ওয়ারেন দাদুর ধাঁধা-বাক্স-
শোনা যায় লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রেতাত্মা আলিপুরের হেস্টিংস হাউসে তাঁর হারিয়ে যাওয়া কিছু প্রিয় জিনিষকে এখনও খুঁজে বেড়ান। অনেকেই নাকি তাঁকে দেখেছেন।
কিশোর মহীর ঠাকুরদা আদিনাথ বাবুর এক বন্ধু ওয়ারেন উইলিয়াম ওয়াটসন অর্থাৎ মহীর ওয়ারেন দাদু মহীদের বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির ফলে তিনি শান্তিনিকেতনে চলে যান আর ওখানেই রহস্যজনকভাবে মারা যান। তারপর তাঁর উকিল এসে আদিনাথ বাবুকে একটি বাক্স এবং একটি খাম (তার মধ্যে আছে একটি চিঠি ও আরো একটি ছোট মুখবন্ধ খাম) দিয়ে যান। এই বাক্সটি আবার ওয়ারেন দাদু তাঁর ধর্মবোনের ছেলে মনোজিৎ রায়কে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন আদিনাথ বাবুকে। কিন্তু মনোজিৎ কলকাতায় আসার আগেই খুন হয়। আদিনাথ বাবু বাধ্য হন খামের মধ্যে থাকা ছোট খামটি খুলতে। এরপরেই এই বাক্স নিয়ে যত ঝামেলার শুরু হয়। আস্তে আস্তে অনেক চরিত্র এসে ঢোকে এই গল্পে। মহীদের বাড়িতে অনেক আশ্রিত ছেলে ওখানে থেকে পড়াশোনা করে যেমন, হীরক, রণেশ, মধুপ ইত্যাদি। আরও থাকেন পুরোনো কলকাতা নিয়ে বই লিখতে আসা একজন ইতিহাসপ্রেমী অত্যন্ত ভালোমানুষ মোহন মিশ্র। এছাড়াও গোয়েন্দা রাম বাবু, কুলদীপ সুদ ইত্যাদি অনেকেই আসেন। তেমনি আসে একের পর এক ছড়ার আকারে ধাঁধা। এই ধাঁধাগুলির সমাধানের জন্যে একজন এগিয়ে আসে আর গোটা কলকাতা ঘুরে বেড়ায় তার সাকরেদকে নিয়ে।
কে এই বুদ্ধিমান চরিত্র আর কে তার সাকরেদ?
মনোজিৎকে কে মারলো?
বাক্সে কী আছে? ওয়ারেন হেস্টিংসের সাথে তার কীইবা সম্পর্ক?
ধাঁধাগুলি কী আর উত্তরই বা কী?
আমি আর একটুও বলবোনা! এবার সবকিছুর উত্তর যদি জানতে হয় তাহলে অবশ্যই পড়তে হবে এই গল্পটি।
ছড়াগুলো বেশ লেগেছে। দুজনের সাথে কলকাতা ঘুরতেও বেশ ভালোই লাগলো আমার! টুইস্টটা বেশ ভালো ছিল।
২. শান্টুর টিম-
শান্টুর কোনও টিম নেই। বেচারার আছে শুধু একটা সবুজ সাইকেল আর গাবদু নামের একটি কুকুর। জোর জবরদস্তি করলেও লোকে নেয়না ওকে টিমে! গোটা এলাকার মানুষ, স্কুলের সবাই, বাড়ির সবাই শান্টুর কাজকর্ম নিয়ে বড়ই ভীত! কারণ পড়াশোনা বাদে দুষ্টুমিতে, মারামারিতে সে এক নম্বর! স্কুলে প্রশ্ন করলে এমন উত্তর দেয় যে মাস্টারমশাইরা নিজেদের চুল ছিঁড়তে বাকি রাখেন শুধু!
যেহেতু শান্টুরা লখনসায়রের রাজার বংশধর তাই গঙ্গার পাড়ে একটি ভাঙাচোরা গড় বা রাজপ্রাসাদ(যেটি লক্ষণ সেনের গড় নামে পরিচিত) তাদের সম্পত্তি। প্রবাদ আছে যে লক্ষণসেন তাঁর সব সম্পদ এখানেই কোথাও লুকিয়ে রেখে গেছেন। এই গড় কিনে হোটেল করার নামে বিস্তর লোকের আনাগোনা শুরু হয়। কে ভালো লোক আর কে খারাপ লোক শান্টু ও তার প্রিয় বন্ধু তমো ঠিক বুঝে উঠতে পারে না! শেষে শান্টু ও তার টিম (একদম! শান্টু কিন্তু মোটেই একা নয়! কিন্তু টিমে কারা আছে সেটা বলে দিলে তো হয়েই গেল!) কীভাবে বদমাশ লোকেদের শায়েস্তা করবে তার জন্য গল্পটা তো পড়তে হবে নাকি!
আমার এই গল্পটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে! আসলে নিজের ছোটবেলার কথা ভাবছিলাম! না না শান্টুর মতন সাহসী নই কিন্তু দুষ্টুমিতে ওর মতনই ছিলাম! এছাড়া এখানেও কিন্তু ছড়ার ধাঁধা আছে। পড়ে দেখুন ভালো লাগবে।
৩. স্যার রজার ডৌলারের মোতি-
আবার প্রথম গল্পের মহীবাবু ফেরত এসেছেন এই গল্পে। এবার ঘটনাস্থল পলাশীতে, মহীর মামাবাড়িতে। গরমের ছুটিতে মামাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে মহী আবার জড়িয়ে পড়ে রহস্যের ঘনঘটায়। ওর মামাবাড়ি নাকি বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মোহনলালের বাড়ি ছিল। সেখানে নাকি আবার স্যার রজার ডৌলারের মোতি লুকানো আছে! সে মোতি আবার যে সে মোতি নয়! খাঁটি পারস্যদেশের মোতি যা বিখ্যাত ফরাসী পর্যটক তেভের্নিয়ে এই দেশে এসে ঔরঙ্গজেবকে বিক্রি করেন। মোতিটি সেখান থেকে বিভিন্ন হাত ঘুরে মহীর দাদুর পূর্বপুরুষদের কাছে আসে। ব্যস আবার দুষ্টু লোকের আনাগোনা শুরু। এদিকে ছোটমামার গবেষণার চোটে লোকের প্রান ওষ্ঠাগত! কিন্তু মহীকে দেখলেই সে মারতে যায় বা মার খাওয়ানোর চেষ্টা করে আবার প্রতিবারই মহীকে তার নতুনদা বাঁচায়!
কে এই নতুন? ওয়াটসন এক থাকলেও শার্লক হোমস কেন বদলে গেল শেষে? স্যার রজার ডৌলার কি আদৌ ইংরেজ ছিলেন? মোতি কি খুঁজে পাওয়া গেল শেষমেশ?
সব কিছুর উত্তর পড়লেই পাওয়া যাবে!!!
এখানেও কিন্তু ছড়ার ধাঁধা আছে! আর সাথে অ্যানাগ্রামও আছে!
**অ্যানাগ্রাম হল কোন একটি শব্দ বা বাক্যের বর্ণগুলোকে নতুনভাবে সাজালে অন্য শব্দ বা বাক্য পাওয়া যেতে পারে; পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে প্রাপ্ত নতুন শব্দ বা বাক্যটিকে মূল শব্দ বা বাক্যটির অ্যানাগ্রাম বলে। পুনর্বিন্যাসের সময় একটি বর্ণ কেবলমাত্র একবারই ব্যবহার করা যাবে এবং কোন বর্ণ বাদ দেয়া যাবেনা। যেমন: আমরা=আরাম, নবপল্লব=পল্লব বন, ইত্যাদি।
(গল্পে ব্যবহৃত একটা অ্যানাগ্রাম কিন্তু এখন চোখের সামনেই আছে! বলুন তো সেটা কী? খুঁজুন খুঁজুন!!!)😁
এবার একটু লেখকের গুনগান করি! আগেই বলেছি উনি বেশ পপুলার লেখক, সব্বাই ওনাকে চেনেন, হয়ত আমার থেকেও অনেক বেশি চেনেন। তাই বেশিকিছু লিখলাম না আর! শুধু একটাই কথা আবার বলবো, আমি ওনার লেখা খুব কমই পড়েছি কিন্তু যে কটাই পড়েছি তাতেই আমার বেশ লেগেছে ওনার লেখা।
প্রচ্ছদ শিল্পী বোধকরি 'অদম্য'-কে ভুলতে পারেননি।😁 একটু অন্যরকম হলে ভালো লাগতো আরো।
বানান ভুল সেভাবে চোখে পরেনি।
সমাপ্ত।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।