উত্তরপুরুষ
রিজিয়া রহমান।
এই উপন্যাসটি বাংলাদেশি উপন্যাস। প্রেক্ষাপট, লেখিকা সমস্তটাই বাংলাদেশনির্ভর। মূলত চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতীত ও বর্তমান এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। 1977 খ্রিস্টাব্দে উপন্যাসটি রচিত।
চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার ফিরিঙ্গি পাড়ার বুড়ো অ্যান্টনি ডিক্রুজ আজও নিজেকে পর্তুগিজ জলদস্যুদের উত্তরপুরুষ ভেবে শ্লাঘা বোধ করেন, প্রবল পরাক্রমশালী পূর্বপুরুষদের অসামান্য বীরত্বের কথা চিন্তা করে পুলকিত হন, সেই নিয়ে রিসার্চ করে বই লেখার কথা ভাবেন। নিজেদের জাতির বর্ণময় মহিমান্বিত বীরগাথা গাইবার সময় একবারও তাঁর নিজের অর্থকষ্ট বিড়ম্বিত জীবনের কথা মনে পড়ে না। সংসার চালাতে গিয়ে স্ত্রীর নাকাল অবস্থার কথা মনে পড়ে না। বাড়ির নিত্য অশান্তির কথাও মনে পড়ে না। কিন্তু এন্টনির ছেলে বনি, যার কিনা বহিরঙ্গেও পর্তুগিজ চেহারার ছাপ চোখে পড়ার মত, তার মনে কি এক ঝড় চলে, তার কাছে তাদের পূর্বপুরুষের কার্যকলাপ বীরত্বব্যাঞ্জক নয়। তারা নিষ্ঠুর খুনি ছাড়া আর কিছুই নয়। ঝুপড়ি বস্তিতে টালির বাড়িতে ফাটা জুতো পরা এন্টনির উপলব্ধি কি পাল্টাবে! তাদের অবস্থার কি পরিবর্তন হবে!তারা কি আবার সুস্থ আর্থিক অবস্থায় ফিরতে পারবে নাকি কয়েক শতাব্দী আগের তাদের পূর্বপুরুষদের অকারণ নিষ্ঠুরতার পাপ, ক্রমশ ধংসের মুখে নিয়ে গিয়ে ফেলবে এন্টনিদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে।
উপন্যাসটির সবচেয়ে আকর্ষক বিষয় যেটা মনে হয়েছে, অতীতের বাংলাদেশের শ্যামলা প্রকৃতি , সেই সময়ের মানুষের নিশ্চিন্ত যাপন এর মাঝে কালান্তক ঝড়ের মতো জলদস্যুদের আগমনের যে পরস্পরবিরোধী চিত্র লেখিকা কলমের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন তা একেবারে অসামান্য মুগ্ধ করার মত।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।