ত্রিভুজ লেখিকা: সাথী দাস Trivuj pdf download & Book Review

ত্রিভুজ লেখিকা: সাথী দাস Trivuj pdf download & Book Review

বই: ত্রিভুজ 
লেখিকা: সাথী দাস 
লালমাটি প্রকাশন 
মূল্য: ৪৮৬ টাকা 

“বুকের প্রবল রক্তক্ষরণের সঙ্গে অন্তর্দহনের নাম ত্রিভুজ… 

সম্পর্কের জ্যামিতিক নাম ত্রিভুজ… 

চরম-প্রাপ্তির অপর নাম ত্রিভুজ…” 
 

এই বই এর পাঠ প্রতিক্রিয়া দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি শুধুমাত্র আমার অনুভূতি টুকু ভাগ করে নিতে পারি।  

আমাদের জীবনের সর্বত্রই ত্রিভুজের সমাহার, আপাতদৃষ্টিতে তা চোখে পড়েনা কিন্তু খুঁটিয়ে নিরীক্ষণ করলে তা স্পষ্টতই চোখে পড়ে। 

উপন্যাসটিতে রয়েছে বিচিত্র সমস্ত চরিত্রের সমাহার। পড়তে একবার শুরু করলে, নিজেকে থামানো যায়না। ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয় অনেক আগে থেকেই, পরে বোঝা যায় লেখিকা আগত ঘটনার জন্যই প্লট বিস্তার করে রেখেছিলেন পূর্বেই। 

উপন্যাস যত এগিয়ে  যেতে থাকে খুলতে থাকে পরতের পর পরত, গুলিয়ে যেতে থাকে সমস্ত ঠিক ভুল, গন্ডগোল হয়ে যেতে থাকে আগে থেকে ঠিক করা সমস্ত হিসেবের। কিন্তু কারোর জন্য কারোর জীবন থেমে থাকেনা, জীবন কোথায় এনে দাঁড় করায় তাদের? 

জীবনের সমস্ত জায়গায় তৈরি হতে থাকে ত্রিভুজের। ত্রিভুজের তিন শীর্ষবিন্দুতে থাকা মানুষ নিরন্তর জ্বলতে থাকে সবসময়, আবার কখনো দুই শীর্ষবিন্দুর মানুষ নিজেরা জ্বলে-পুড়ে ত্রিভুজের ভরকেন্দ্রেতে থাকা কোনো মানুষকে এগিয়ে দেয় অপর এক শীর্ষ বিন্দুর দিকে। আদেও কি কখনো শীর্ষবিন্দুরা পারে ত্রিভুজ থেকে বেরিয়ে যেতে? ত্রিভুজ এর শেষ কোথায়?ত্রিভুজ কিভাবে শেষ হয়?এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিয়েই রচিত এই দীর্ঘ মনস্তাত্বিক উপন্যাস। 

এই উপন্যাসের দুই মাতৃ চরিত্র বড় কাছের,বড় স্নিগ্ধ, বড় সুন্দর, বড় ব্যক্তিত্বময়ী। বন্ধুত্বের সংজ্ঞা নতুন করে নজর কাড়ে। এই উপন্যাসের ঋক- ঋদ্ধি, এই দুই ভাইয়ের চরিত্র আজীবন মনে রাখবো আমি, মনে দাগ কেটে যাবার মত দুই চরিত্র। প্রার্থনা করি, আমার জীবনেও যেনো কোনো ঋক আসে। ঝিনুকের চরিত্রটি খুব স্বল্প পরিসরে ভীষণ মায়াময়, তাকে এই দীর্ঘ উপন্যাসের মধ্যেও এত জটিল সমস্ত চরিত্রের বেড়াজালের মধ্যেও আলাদা করে মনে রেখে দেওয়া যায়।  

লেখাটি কিছু বছর আগে ফেসবুকে লেখিকা নিজেই পর্ব অনুসারে ভাগ করে পোস্ট করতেন। তখন আমার পড়ার সুযোগ হয়নি কারণ তখন আমার হাতে ফোন আসার সুযোগ ছিল না। বেশ কিছুদিন আগে আবার তিনি এই উপন্যাসটির প্রথম দশটি পর্ব পোস্ট করেছিলেন তার লেখার পেজটিতে। প্রথম দশটি পর্ব পড়ার পর যখন জানলাম আর উনি পরের পর্ব পোস্ট করবেন না, সেদিন রাতে ঘুম হয়নি আমার, যেন মনে হয়েছিল এই বইটা শেষ না করলে দমবন্ধ হয়ে যাবে আমার। সিনেমা দেখার জন্য হাতখরচ বাঁচিয়ে টাকা জমিয়েছিলাম, সেই টাকা নিয়েই পরেরদিন ছুটলাম কলেজস্ট্রিট, নিয়ে এলাম আমার কাঙ্ক্ষিত বইটিকে। কিন্তু পড়তে পারছিলামনা, মনে হচ্ছিল বইটা পড়ার সাথেসাথেই একটু একটু করে ঋককে শেষ করে ফেলছি আমি, বইটা শেষ হলেই আর ওকে ছুঁতে পারবনা। একটু অদ্ভুত না?? রোমান্টিসাইজ করা স্বভাব আমার। শেষমেষ শেষ করেছি। বইটা শেষ করার পর মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছি পুরোপুরি, বইটা কোলে নিয়ে বসে ছিলাম দীর্ঘক্ষণ। যেখানে উপন্যাস শেষ হলো, বলা ভালো যেভাবে শেষ হলো তার থেকে ভালো বোধ হয় আর কিছু হতনা কারণ জীবন যে কঠিন রূঢ় বাস্তব, তাকে এড়ানোর সাধ্য কই? বইটার প্রথম পাতায় লিখে রেখেছি, “ঋকময় হোক আমার জীবন”।

Post a Comment

0 Comments