ঝিরঝিরে বৃষ্টি
শুভজিৎ বিশ্বাস
- বাইরের ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে খেয়াল করেছো!
- হুম, দেখলাম।
- পড়ছে তো, খুব মনে পড়ছে।
যাই হোক, নীরাবতা কাটিয়ে দিয়া, দিপকে বললো,
না দীপ আজ আর ছাতা নেওয়ার কথা বললো না।
সমাপ্ত
শুভজিৎ বিশ্বাস
দোতলায় জানালার ধারে বসে কিছুটা দূরের বঙ্গোপসাগরের উথাল পাতালের ঢেউ এ কখন যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলল দীপ। হঠাৎ দিয়ার ডাকে নিজেকে নিজের মধ্যে খুঁজে পেল্।
- কি ভাবছো আনমনে? - বাইরের ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে খেয়াল করেছো!
- হুম, দেখলাম।
- কিছু কথা মনে পড়ছে। আচ্ছা, দিয়া, মনে পড়ে আমাদের প্রথম আলাপ, প্রথম দেখা আর বৃষ্টিতে ভেজা ....... !
- আজ বুঝি মনে পড়ছে খুব! - পড়ছে তো, খুব মনে পড়ছে।
দুজনেই বাইরের বৃষ্টি দেখছে একদম চুপচাপ। কখন যেন নিজেদের ভাবনা একই সুতোয় বাঁধা পড়ে গেছে ওদের কেউ সেটা বুঝতেই পারলো না।
হঠাৎ একদিন কলেজেই দেখা কতকটা আড্ডার ছলে ....... । তারপর WhatsApp এ যোগাযোগ, অনেক অনেক গল্প । বন্ধুত্বের অছিলায় নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা শেয়ার করা, ধীরে ধীরে তাদের গল্পের পরিমাণ বাড়তে লাগলো। দুজনেই অনুভব করলো তারা যেন কোথাও না কোথাও একে অপরের পরিপূরক। তারপর প্রথমে পছন্দের কথা তারপর ভালোবাসার কথা শেয়ার করতে যেন সময় লাগলো না। যেন দুটি চরিত্র যা না হলে একটা সম্পূর্ণ জীবনের গল্প কোথাও না কোথাও অসমাপ্ত রেখে যায়। তারা প্রতিটি মুহুর্তে অনুভব করলো, বিপরীত দিকের মানুষটাকে যদি একবার সামনে দেখতে পেতাম, খুব ভালো হত। সত্যি বলতে, সেটা হলোও তাই। কয়েকদিন পর আবার দুজনের সামনা সামনি দেখা, তবে এবার দেখার চোখ দুটো একই থাকলেও ভাবনার রেখাচিত্র পরিবর্তন হয়েছে। দুজনে ঠিক করলো একসাথে ফিরবে আজ, সেইমতো বেরিয়ে পড়লো। বাইরের বেরোতেই হঠাৎ ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হলো। দীপ বারবার ছাতা বের করার কথা বললেও দিয়া কিছুতেই ছাতা ব্যবহার করতে দিল না বরং দিয়া বললো," এই মুহুর্তটা জীবনে হয়তো দ্বিতীয় বার আসবে না। এই মুহুর্তটা আমাদের ভালোবাসার খাতায় একটা স্মৃতিচিহ্ন রেখে যাবে। মুহুর্তটা যে খুব দামি। " না সেই মুহুর্তটা অল্প পরিসরে সীমাবদ্ধ ছিল না সেদিন। পথে আসতে আসতে হঠাৎ একটা শিব-কালীর মন্দির দেখতে পেল। দিয়া দীপকে একটু অপেক্ষা করতে বলে মিষ্টির দোকানে গিয়ে পাঁচ প্রকার মিষ্টি কিনলো, মন্দিরে গিয়ে ভোগ নিবেদন করল। তারপর আবার দীর্ঘ পথ একসাথে হাঁটা। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা সেদিন যেন জানিয়ে দিতে চেয়েছিল এভাবেও ভালোবাসা যায়। পথে চলতে চলতে একটা গান খুব মনে পড়ছিল দীপের " এই পথ যদি শেষ না হয় .......।"
জীবনের প্রতিটি গল্প আমাদের নতুন কিছু শেখায়, কখনও গল্পগুলো বড্ড ছোটো হয়, কখনও গল্পগুলো বড়ো আবার কখনও একটা সম্পূর্ণ একটা উপন্যাস, তবে সেটা যায় হোক না কেন গল্পের শেষে যে অনুভূতি থেকে যাই সেটাই হয়ত পরবর্তী গল্পের জন্য খোরাক জোগাড় করে। দিন শেষে আমরা সবাই যেন অপেক্ষা করতে ভালোবাসি কারণ অতিরিক্ত দুঃখের মতো অতিরিক্ত সুখও যেন একটা অস্বিস্থি রেখে যায়। আর সেজন্যই পৃথিবীর সমস্ত সম্পর্কের মধ্যেই একটা ভাঙন, একটা অমত মাঝে মাঝে থাকা উচিত। সেটা সম্পর্কের দৃঢ়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে সম্পর্ক বুঝতে শেখায়। দীপ আর দিয়ার গল্পেও কিন্তু প্রচুর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল যা তাদের সম্পর্কে একেবারে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিল কিন্তু তাদের আত্মবিশ্বাস তাদের দূরত্বের মাঝে কখনও পাঁচিল গড়তে পারেনি। জীবনের কোনো পর্যায়ে যখনই ক্লান্তি নেমে আসে ঠিক তখনই তারা প্রমানিত করেছিল পবিত্র ভালোবাসার কাছে সবাইকে পরাজিত শিকার করতেই হয়।
যাই হোক, নীরাবতা কাটিয়ে দিয়া, দিপকে বললো,
- চলো, ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে কয়েক পা একসাথে হেঁটে আসি, দ্বিতীয় বার যখন সুযোগটা পাওয়া গেল।
- চলো। না দীপ আজ আর ছাতা নেওয়ার কথা বললো না।
সমাপ্ত
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।