ঈশ্বরের বাসা - তিলোত্তমা মজুমদার
প্রকাশকালঃ ১৪২১
ঈশ্বরের বাসা বা দি গডস নেস্ট, সেখানে কারা থাকে? নিশ্চয়ই ভগবান থাকেন। কিন্তু না, এই উপন্যাসে ঈশ্বরের বাসায় থাকে কিছু মায়ে তাড়ানো বাপে খেদানো ছেলে পুলে বা হয়তো কেউ নিজেই নিজেকে খেদিয়ে নিয়ে এসে পড়েছে, যাদের বাবা বা আত্মীয়স্বজন স্টেশনে এসে ছেড়ে দিয়ে যায় বা বাবা মায়ের অনিচ্ছাকৃত ভুলের শাস্তি হিসাবে স্টেশন ধারে বা ঝুপড়িতে ফেলে দিয়ে যায়। হাওড়া স্টেশনের ঝুপড়ির ধারে গড়ে ওঠা এই ঈশ্বরের বাসার কর্মাধ্যক্ষ ফাদার হকিন্স।তিনি এই বিনামূল্যে থাকা খাওয়া ছাত্রাবাস গঠন করে এই সমস্ত ছেলেদের পড়াশোনার কিংবা হাতের কাজ শিখে নিজের জীবন গোছানোর জন্য সাহায্য করেন। সবাইকে কিন্তু এমনি এমনি সেখানে থাকতে দেওয়া বা খেতে দেওয়া হয়না। একমাত্র বেছে বেছে নেশা মুক্ত যারা বা পড়াশোনায় ভালো তাদেরকেই সুযোগ দেওয়া হয়।
এই উপন্যাসের মূল চরিত্র হল মিঠু নামের একটি ছেলে যার তথাকথিত বাবা তাকে মামাবাড়িতে মা এর কাছে নিয়ে যাওয়ার নাম করে একটু ডিম আর ভাত খাইয়ে তাকে হাওড়া স্টেশনে ভিড়ের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।। ছোট্ট মিঠু কিছু বুঝে ওঠার আগেই একজন সর্বভূক নিষ্ঠুর কামবিকৃত মানসিকতার ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে।। ঝুপড়ির ই এক মহিলা তাকে বাঁচায় এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তারপর থেকে সে ওখানেই থাকে এবং প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া এক স্কুলে পড়াশোনা করে। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ঈশ্বরের বাসা তে। অনেক জন অনেক ভাবে জিজ্ঞাসা করলেও সে কিভাবে হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছালো সেটা সে জানায় না আর বাবা নামটার সাথে এত ঘেন্না মনের মধ্যে যে সবার ফাদার হকিন্স কেও সে স্যার বলে সম্বোধন করে।।। গল্প এবার চলতে থাকে তার আপন গতিতে। ঈশ্বরের বাসার বিভিন্ন ছেলেদের চরিত্র, তাদের কাজ, ভালোবাসার জায়গা, তাদের পরিণতি সবকিছু নিয়ে।। কেউ কেউ অন্ধকার জগত থেকে ফিরে আসে আবার কেউ নিজের ইচ্ছাতেই পা বাড়ায় অন্য জগতে।।
মিঠু নামের ছেলেটির জীবন আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকে। অঙ্ক নিয়ে সাধ্য সাধনা শুরু হয়।। দেশের পরীক্ষায় অঙ্কে প্রথম স্হান দখল করে প্রতি বছর।বিদেশে গিয়ে একজন নিঃসন্তান দম্পতির ছেলে হয়ে থাকার সুযোগ দেন ফাদার হকিন্স কিন্তু সে সুযোগ সে অগ্রাহ্য করে। কারোর ছেলে হতে সে নারাজ কারণ বাবা নাম টাকে তার ঘেন্না। এরপর আস্তে আস্তে সে বড় হয়, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়, নিজের ফ্ল্যাট কেনে। একজন মেয়ের সাথে ভালোবাসা হয়ে বিয়েও হয়, সংসার ও হয়
নিজের ছেলেও হয় কিন্তু সে কিছুতেই সেই পুরানো কথা ভুলতে পারেনা তাই নিজের ছেলে কে একই ভাবে স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে আসে। কোনও বাচ্ছাই তার মা বাবার সাথে সুখী, সেটা হয়তো কোথাও গিয়ে তাকে আঘাত করে। কিন্তু তার ছেলে নিজের পরিচয় বলে বাড়ি চলে আসে লোকজনের সাহায্য নিয়ে তবে সে জানিয়ে দেয় তার মা কে আর মিঠুর সাজানো সংসার ভেঙে যায়।
লেখিকা এতো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিটা চরিত্র যে মনে হবে চোখের সামনে সিনেমা চলছে।আপনারা অবশ্যই পড়ে দেখুন। অনেক কিছু শেখা যাবে।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।